জরায়ুমুখের ক্যানসারের লক্ষণ কী কী জেনে নিন..
জরায়ু মুখের ক্যানসার একটি বেশ প্রচলিত ক্যানসার। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার ধরা পড়লে রোগ নিরাময় অনেক সহজ হয়।
প্রশ্ন : এই ক্যানসারটিকে জরায়ুমুখের ক্যানসার বলে কেন? জরায়ুর ক্যানসার নয় কেন?
উত্তর : জরায়ু বা ইউটেরাস নামক অঙ্গটির ভেতরে আমরা প্রত্যেক মানুষ জন্ম নিই। পুরো জরায়ু থেকে জরায়ুমুখটি একটু ভিন্ন প্রকৃতির। যেহেতু এই অংশের ক্যানসারটি মহিলাদের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে, তাই একে আমরা আলাদা করে জরায়ুমুখের ক্যানসার বলি।
প্রশ্ন : জরায়ুমুখের ক্যানসারে একজন নারী আক্রান্ত হন কেন?
উত্তর : জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে কতগুলো আর্থসামাজিক এবং কিছু ব্যক্তিগত কারণ রয়েছে। আমাদের বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশের বেলায় যেখানে, মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা বেশিরভাগই একটু নিম্ন পর্যায়ের থাকে, সেসব দেশে আমরা প্রধানত দায়ী করি বাল্যবিবাহকে। খুব অল্প বয়সে যদি মেয়েদের বিয়ে হয় এবং অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার সাথে সাথে যদি সন্তান হয়, যদি বেশি সন্তান হয়, সন্তান ঘন ঘন হয়- তাহলে জরায়ুমুখের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এগুলো অন্যতম প্রধান কারণ। এর সাথে রয়েছে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অভাব। বিশেষ করে মাসিকের সময় ব্যবহার করার বিষয়গুলো যদি জীবাণুমুক্ত না হয় তবে সমস্যা হয়। এই ক্যানসারের ক্ষেত্রে অপরিচ্ছন্নতাও দায়ী। এর সাথে আসে অপুষ্টি। অপুষ্টি একটি বিষয় যেটা অন্য কারণগুলোকে উৎসাহিত করে। আরেকটি বিষয় রয়েছে, সেটি হলো নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে একাধিক সঙ্গীর সাথে যে মেলামেশা- এটি একটি বড় কারণ। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিষয়টি আছে। তবে উন্নত বিশ্বে এই হারটা বেশি। আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো, একটি ভাইরাস, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ( এইচপিভি)। এই ভাইরাসকে বলা যায় প্রধান কালপ্রিট। অন্য যে কারণেই হোক না কেন এটি একটি প্রধান কারণ। এই ভাইরাসের সংক্রমণ যদি বারবার হয়, তাহলে জরায়ুমুখের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
প্রশ্ন : জরায়ুমুখে এই ভাইরাসের সংক্রমণ কী করে হয়?
উত্তর : শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে মূলত এই ভাইরাস ছড়ায়। এ ছাড়া এইচপিভি দিয়ে শরীরের অন্যান্য জায়গাতেও সংক্রমণ হয়। যেমন মুখের গহ্বর থেকে শুরু করে জরায়ুমুখের ক্যানসারও হয়। সারা পৃথিবীতে পাঁচ লাখ ২৮ হাজার মহিলা নতুন করে জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হয় প্রতিবছর। দুই লাখ ৬৬ হাজার মারা যায়। এর শতকরা ২০ ভাগ নতুনভাবে আক্রান্ত হয় এবং শতকরা ১০ ভাগ মৃত্যু হয় উন্নত বিশ্বে।
প্রশ্ন : আমাদের দেশের অবস্থা কী?
উত্তর : আমাদের মতো স্বল্প উন্নত দেশগুলোতেই ঘটে শতকরা ৮০ ভাগ থেকে ৯০ ভাগ, আক্রমণ ও মৃত্যু। সারা পৃথিবীতে মহিলাদের ক্যানসারের মধ্যে জরায়ুমুখের ক্যানসারটি চতুর্থ নম্বরে এবং নারী-পুরুষ মিলিয়ে সার্বিকভাবে সাত নম্বরে। বাংলাদেশ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সংস্থা, ক্যানসারের আক্রান্তের হার, মৃত্যুর হারসহ সব ধরনের গবেষণা করে আইএআরসি। তারা বাংলাদেশ সম্পর্কেও একটি হিসাব দেখিয়েছে, সেখানে তারা বলেছে, বাংলাদেশের মহিলাদের মধ্যে এই ক্যানসার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এবং নারী-পুরুষ মিলিয়ে এটি তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
প্রশ্ন : জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হলে তার কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ, মাসিকের রাস্তায় যদি অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হয় তাহলে হতে পারে। এটি কয়েক রকম হতে পারে। যেমন : আমরা জানি প্রতিমাসে মহিলাদের মাসিক হয়, সেই সময়টি যদি হঠাৎ করে বেড়ে যায়, যে পরিমাণ রক্ত সাধারণত যায় এর থেকে যদি বেশি পরিমাণ রক্ত যাওয়া শুরু করে। মাসের মাঝখানে যদি আবার এ রকম রক্তক্ষরণ হয়। মেনোপোজের পর যদি হঠাৎ করে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। স্বামী-স্ত্রীর মিলনের পর যদি রক্তক্ষরণ হয় বা ব্যথা হয়- এগুলো হলো প্রধান লক্ষণ। তবে রোগটি যখন একটু অগ্রসর হয়ে যায়, যখন আশপাশের গঠনগুলো আক্রান্ত হয়ে যায়, তখন ধীরে ধীরে আরো কিছু কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন তলপেটে ব্যথা হতে পারে। তারপর প্রস্রাবের রাস্তার সাথে, পায়খানার রাস্তার সাথে এটি যুক্ত হয়ে যেতে পারে। এ রকম খুব বাজে ধরনের লক্ষণ হতে পারে।
প্রশ্ন : একজন মহিলা যদি প্রাথমিক অবস্থায় আসেন, তখন জরায়ুমুখের ক্যানসারের ক্ষেত্রে ভালো হওয়ার আশা কতখানি?
উত্তর : জরায়ুমুখের ক্যানসারের একটি মজার বিষয় রয়েছে, লাখ লাখ কোষ দিয়ে তো আমাদের শরীরটা তৈরি, এই কোষের মধ্যে আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে হতে তো একপর্যায়ে ক্যানসার হয়- জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রথম শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ২০ থেকে ২৫ বছর পর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। অনেকে বলে খুব লম্বা সময় লাগে ওই আগ্রাসি ক্যানসার পর্যন্ত যেতে।
লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগেই এই ক্যানসার আমরা নির্ণয় করতে পারি। এখানে দুটো প্রধান পরীক্ষা রয়েছে। যাকে প্যাপটেস্ট বলি, যাকে গোল্ডস্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আরেকটি হলো ভায়া টেস্ট, ভিআইএ। এখানে কোনো মাইক্রোস্কোপ লাগবে না, স্লাইড লাগবে না। শুধু খালি চোখে একটি পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা বলব সমস্যাটি হয়েছে কি না। এই রোগ প্রথম দিকে ধরার একটি বিরাট সুযোগ রয়েছে। এটিও একটি আশাদায়ক পরিস্থিতি।
ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবাই মিলে বসে একটি সিদ্ধান্ত নেয়। অস্ত্রোপচার করবে, নাকি ক্যামোথেরাপি দেবে, না কি রেডিওথেরাপি দেবে- এগুলো দেখা হয়। সাধারণত চারটি পর্যায়ে আমরা বিষয়টিকে ভাগ করি- ১, ২, ৩ ও ৪। এর মধ্যে আবার এ, বি করে ভাগ করা হয়। যখন পর্যায় ২ পর্যন্ত অবস্থা থাকে তখন প্রথম চিকিৎসা হলো অস্ত্রোপচার করে ফেলে দেওয়া। আপনারা যদি প্রথম অবস্থায় লক্ষণ দেখা দিলে আসেন, তখন অস্ত্রোপচার করে ফেলে দেওয়া হয়। পরে যদি অন্যান্য চিকিৎসা লাগে সেগুলো করা হয়। এই চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ব্যাপক। এটি হলো একটি আশার দিক।
আর যদি দেরি হয়ে যায় বা ওই পর্যায়টি পার হয়ে যায়, তখন হয়তো সাথে সাথে অস্ত্রোপচার করা যায় না। রেডিওথেরাপি বা ক্যামোথেরাপি দিয়ে সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করার পর যদি একটু ভালো হয় আবার অস্ত্রোপচারের দিকে যাওয়া যায়। যত আগে ধরা পড়বে তত লাভ। আগে ধরা পড়লে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
তুকতাক করার অভিযোগে গ্রেফতার মালদ্বীপের নারী মন্ত্রী
মালদ্বীপের নারী মন্ত্রী ফাতিমা শামনাজ আলী সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারবিস্তারিত পড়ুন
ওডিশার প্রথম নারী মুসলিম এমএলএ সোফিয়া ফিরদৌস
ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ওডিশা থেকে প্রথম নারী ও মুসলিম এমএলএবিস্তারিত পড়ুন
গফরগাঁওয়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক শামছুন নাহার
জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ- ২০২৪ এ ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়েবিস্তারিত পড়ুন