শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

ডাক্তার তুমি কার? রোগীর নাকি টাকার?

বড় সাইজের এক্সরে ফাইল হাতে আমার এক কাজিন মানিকগঞ্জের ইসলামী ব্যাংক কমিউনিটি হাসপাতালের গ্রাউন্ড ফ্লোরে পায়চারি করছে। আমি অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছি; তার চিন্তিত মুখ দেখে এগিয়ে যাই। জানলাম অর্থোপেডিক সার্জন ডা. সিরাজকে দেখাবেন। সিরিয়াল ৫৭। এখন চলছে ৩। তার মানে জুমা নামাজের পর দেখানো যাবে হয়তো! আমি তাকে নিয়ে ডাক্তারের রুমের সামনে যাই। সিরিয়াল মেইনটেইন বয়কে আমার ভিসিটিং কার্ড দিয়ে বল্লাম ডাক্তারকে দিতে।

সাধারণত মফস্বলের ক্লিনিকগুলোতে ডাক্তারের চেম্বারের টেবিল ছোট হয়। ডাক্তার সিরাজের টেবিল দেখলাম একটু বড়। দেখলাম টেবিলের প্রায় পুরোটাই ফিজিশিয়ান স্যাম্পল ওষুধে ভরা। ডাক্তারের শুধু প্রেসক্রিপশন লেখার জায়গাটুকু বাদ রয়েছে। হাত এগিয়ে দেই হ্যান্ডশেক করতে। ডাক্তার অন্য এক রোগী দেখছিলেন হ্যান্ডশেক না করে বলেন টেবিলের সামনের চেয়ারে বসতে। একটি চেয়ার খালি দেখে কাজিনকে বসতে দিই। আমি দাঁড়িয়েই থাকি।

ডাক্তার সিরাজ রোগীর প্রেসক্রিপশন লিখছেন আর তার টেবিলে রাখা ওষুধের ভাণ্ডার থেকে ওষুধ নিয়ে রোগীকে দিচ্ছেন। লিখছেন আর দিচ্ছেন, লিখছেন আর দিচ্ছেন আর আমি অবাক হচ্ছি! তারপর এলো আমার কাজিনের পালা। কাজিনকে দেখা শেষে ওষুধ লিখছেন আর তার টেবিলের ওষুধগুলো আমাকে দিচ্ছেন, লিখছেন আর আমাকে দিচ্ছেন … আমার দুহাত ভরে যাওয়ায় আমি পাঞ্জাবির আঁচলে রাখা শুরু করি! প্রেসক্রিপশনের প্রায় সবগুলোই তিনি তার স্যাম্পল ওষুধ থেকে ফ্রিতে দেন।

আসার সময় তিনিই হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত এগিয়ে দেন এবং মুচকি হাসেন।

মানিকগঞ্জের উথলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারের রুম। রোগীর সিরিয়াল। আমি আমার মেয়ে লাবিবাকে নিয়ে যাই। তখন ওর বয়স আট মাস। ডাক্তার জিয়া বয়স্ক এক রোগী দেখছেন। আমি আমার পরিচয় দিয়ে হ্যান্ডশেক করলাম। বললেন নিচ থেকে স্লিপ নিয়ে আসতে।

আমি লাবিবাকে ওর মায়ের কাছে রেখে নিচ থেকে একটুকরো সাদা কাগজে নাম ও তারিখ লিখিয়ে স্লিপ নিয়ে যাই। লাবিবা কান্না করছে, একবার আমার কোলে আসছে আরেকবার ওর মায়ের কোলে যাচ্ছে। কান্না করছে আর কোল বদল করছে।

অথচ ডাক্তার জিয়া স্লিপ ছাড়া আসা রোগী দেখছেন আর টাকা নিচ্ছেন। টাকা নিচ্ছেন আর রোগী দেখছেন। এক পর্যায়ে লাবিবার কান্না দেখে আমি রেগে যাই। রেগে যেতে বাধ্য হই!

এরা দুজনই ডাক্তার। একজনে স্যাম্পল ওষুধ রোগীদের ফ্রিতে দিচ্ছেন আর একজন সরকারি অফিস টাইমে টাকা নিয়ে রোগী দেখছেন!

চিকিৎসক বা ডাক্তার হলেন একধরণের স্বাস্থ্য সেবা প্রদায়ক, যাঁদের পেশা (অর্থাৎ চিকিৎসাবিদ্যা বা ডাক্তারি) হল শারিরীক বা মানসিক রোগ, আঘাত বা বিকারের নীরিক্ষণ, নির্ণয় ও নিরাময়ের দ্বারা মানুষের স্বাস্থ্য বজায় রাখা বা পুনর্বহাল করা। সূত্র : উইকিপিডিয়া

চিকিৎসা সেবা অতি মহৎ একটি পেশা। স্বদিচ্ছা থাকলে এ পেশায় যে পরিমাণ জনসেবার সুযোগ পাওয়া যায় তা বোধ করি অন্য কোন পেশায় সম্ভব নয়। স্বভাবতই যারা এ পেশায় আসেন তাদের নিকট হতে সততা, দায়িত্বশীলতা, মহানুভবতা, দয়াশীলতা, নীতি –নৈতিকতা, জনকল্যাণ ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় মানবিক গুণাবলী অনেক বেশি প্রত্যাশিত।

ডাক্তারদের নিকট হতে জনগণের প্রত্যাশা বেশি কিছু নয়। তারা চায় একটু ভালো ব্যবহার আর ভালো সেবা। আজকাল ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে জনগণের ভীষণ ভয়। নিতান্তই ঠেকায় না পড়লে কেউ হাসপাতালমুখি হয় না। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ভূরি ভূরি। অনেক ডাক্তারকে ওষুধ কম্পানির এজেন্ট বা ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বললেও অত্যুক্তি হবে না। সংশ্লিষ্ট কম্পানির স্বার্থরক্ষাই যেন তার কাছে মুখ্য বিষয়। বিনিময়ে মেলে অনেক অনৈতিক সুবিধা আর বিবিধ উপঢৌকন।

‘সফদার ডাক্তার’ এর কথা মনে আছে আপনাদের? বর্তমানে ‘কিছু’ নামী-দামি ডাক্তারদের পরিস্থিতি তো ওই কবি হোসনে আরার সফদার ডাক্তারের মতোই!

আসুন একবার দেখে নেই সফদার ডাক্তারে কী ছিলো!

“সফদার ডাক্তার
মাথা ভরা টাক তার
খিদে পেলে পানি খায় চিবিয়ে,
চেয়ারেতে রাতদিন
বসে গোনে দুই-তিন
পড়ে বই আলোটারে নিবিয়ে।
ইয়া বড় গোঁফ তার,
নাই যার জুড়িদার
শুলে তার ভুঁড়ি ঠেকে আকাশে,
নুন দিয়ে খায় পান,
সারাক্ষণ গায় গান
বুদ্ধিতে অতি বড় পাকা সে।
রোগী এলে ঘরে তার,
খুশিতে সে চারবার
কষে দেয় ডন আর কুস্তি,
তারপর রোগীটারে
গোটা দুই চাঁটি মারে
যেন তার সাথে কত দুস্তি।
ম্যালেরিয়া হলে কারো
নাহি আর নিস্তার
ধরে তারে কেঁচো দেয় গিলিয়ে,
আমাশয় হলে পরে
দুই হাতে কান ধরে
পেটটারে ঠিক করে কিলিয়ে।
কলেরার রোগী এলে,
দুপুরের রোদে ফেলে
দেয় তারে কুইনিন খাইয়ে,
তারপর দুই টিন
পচা জলে তারপিন
ঢেলে তারে দেয় শুধু নাইয়ে।
ডাক্তার সফদার,
নাম ডাক খুব তার
নামে গাঁও থরহরি কম্প,
নাম শুনে রোগী সব
করে জোর কলরব
পিঠটান দিয়ে দেয় লম্ফ।
একদিন সক্কালে
ঘটল কি জঞ্জাল
ডাক্তার ধরে এসে পুলিশে,
হাত-কড়া দিয়ে হাতে
নিয়ে যায় থানাতে
তারিখটা আষাঢ়ের উনিশে। ”

মনের মাধুরী মেশানো চিকিৎসা দিয়ে আর কত টাকা কামাই করতে চায় এরা? সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর ভুল চিকিৎসা থেকে শুরু করে মৃত মানুষকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে লাখ লাখ টাকা কামাই করে চলছে ‘কিছু’ ডাক্তার আর হাসপাতাল!

আর কতো?

লেখক : সহসম্পাদক, কালের কণ্ঠ

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?