তালাকপ্রাপ্তা নারীদের অধিকার নিয়ে ইসলাম কি বলে?

‘হে নবী! (উম্মতকে বলুন) তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও, তখন তাদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ রেখে এবং ইদ্দত গণনা করো। তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাাহকে ভয় করো। তাদেরকে তাদের গৃহ থেকে বহিষ্কার করো না এবং তারাও যেন বের না হয় যদি না তারা কোন সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয়। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমা লংঘন করে, সে নিজেরই অনিষ্ট করে। তুমি জান না, হয়তো আল্লাহ এর পর কোন নতুন উপায় করে দেবেন। (সূরা তালাক, আয়াত নং-১)
তালাক ইসলামের বৈধতম অপছন্দীয় একটি ঘৃণিত কাজ। ইসলামে যথাসাধ্য স্ত্রীকে তালাক না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে অপারগ হয়ে গেলে অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। তবে সেই ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ অধিকারকে নিশ্চিত করেছে ইসলাম। সে অধিকার শুধু সম্পদ ও ভরণ পোষণের ক্ষেত্রে নয়, তালাক দেওয়ার পদ্ধতিগত অধিকারও বলে দিয়েছে কোরআন।
তালাকের অধিকার
উল্লিখিত আয়াতে বলা হয়েছে, স্ত্রীকে তালাক দিলে ইদ্দতের প্রতি লক্ষ রাখা, ইদ্দত গণনা করা, কোন সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে (যিনা/ব্যভিাচার) লিপ্ত না হলে স্ত্রীকে ঘর থেকে বের না করা এ তিনটি বিষয় বর্ণিত হয়েছে। এগুলো আল্লাহর বেঁধে দেওয়া সীমারেখা। কোরআনের অপর আয়াতে বলা হয়েছে, তালাকের ক্ষেত্রে দুই জন সাক্ষী রাখতে হবে। আবার পুনরায় সংসার করতে হলেও দুই জন সাক্ষী রাখতে হবে।
তালাক দেওয়ার পর ইদ্দতের অধিকার সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের ঋতুবর্তী হওয়ার আশা নেই, তাদের ব্যাপারে সন্দেহ হলে তাদের ইদ্দত হবে তিন মাস। আর যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি, তাদেরও অনুরূপ ইদ্দতকাল হবে। গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।’ (সূরা তালাক-৪)
এ আয়াত দ্বারা বোঝে আসে, প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের ক্ষেত্রে ইদ্দত কাল হবে তিন মাসিক বা তিন রজস্রাব আর নাবালেগা নারীদের ক্ষেত্রে ইদ্দত কাল হবে তিন মাস। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে ইদ্দতকাল হবে সন্তান প্রসব পর্যন্ত।
উপরোক্ত সূরা তালাকের তিনটি আয়াত বিশ্লেষণ করলে বোঝে আসে, স্পষ্ট নির্লজ্জ কাজ পরিলক্ষিত না হলে স্ত্রীকে তালাক দেয়া যাবে না। আর তালাক দিলে সেক্ষেত্রে তিনটি ইদ্দত তথা মাসিক অপেক্ষা করতে হবে। প্রথম মাসে তালাক দিবে, যদি এর মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মিল হয়ে যায় তবে তারা পুনরায় সংসার করবে। আর যদি মিল না হয় তবে দ্বিতীয় মাসে তালাক দিবে এবং অপেক্ষা করবে। যদি এবার মিল হয়ে যায় তবে সংসার করবে অথবা তৃতীয় মাসে পুনরায় তালাক দিবে। তৃতীয় মাস পূর্ণ হলে তারা যদি মনে করে সংসার করবে অথবা বিচ্ছিন্ন হবে তাহলে দুজন স্বাক্ষী রেখে চূড়ান্ত ফয়সালা করবে। অর্থাৎ সংসার করলেও দুজন স্বাক্ষী রাখবে এবং বিচ্ছেদ ঘটালেও স্বাক্ষী রাখবে। তিন ইদ্দতকাল সময় অপেক্ষা করার মধ্যে হেকমত লুকিয়ে আছে।
কেননা নারী যদি গর্ভবতী হয়ে যায় তবে এ তিন মাসের মধ্যেই বোঝা যাবে। আর গর্ভবর্তী নারীদের ক্ষেত্রে ইদ্দতকাল হবে সন্তান প্রসব পর্যন্ত। অর্থাৎ তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পর যদি সন্তান প্রসব না হয়, তবে সন্তান প্রসব পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সুবহানআল্লাহ! আল্লাহর কি অপার করুনা। সন্তান প্রসবের পরে যদি সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে স্বামী-স্ত্রীর মিল হয়ে যায় তাই গর্ভবতীদের জন্য আল্লাহ প্রসব পর্যন্ত ইদ্দতকাল নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের মূর্খ সমাজের চিত্র খুবই ভয়াবহ। তারা কোরআনের আইন অমান্য করে রাগের মাথায় স্ত্রীকে এক সঙ্গে তিন তালাক দিয়ে বসে। যা সম্পূর্ণ কোরআনের পদ্ধতি বিরোধী। এতে শরিয়তের সীমা লঙ্গণ হয়। অকল্যাণ বয়ে আনে সমাজে।
তালাক চূড়ান্ত হয়ে গেলে নারীর করণীয় কি হবে তাও কোরআনে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে। ‘আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। আর যদি সে আল্লাহ প্রতি এবং আখেরাত দিবসের ওপর ঈমানদার হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ যা তার জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন তা লুকিয়ে রাখা জায়েয নয়। আর যদি সদ্ভাব রেখে চলতে চায়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে নেবার অধিকার তাদের স্বামীরা সংরক্ষণ করে। আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের ওপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের ওপর নিয়ম অনুযায়ী। আর নারীদের ওপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।’ (সূরা বাকারা-২২৮)
এ আয়াতে তালাকের জন্য নারী তিন হায়েজ বা ঋতু¯্রাব পর্যন্ত অপেক্ষা করবে তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ তিন হায়েজ অতিবাহিত না করলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না।
তালাকের অধিকার যে শুধু পুরুষের রয়েছে তাও নয়। স্ত্রীরাও তালাক দিতে পারবে। তবে পুরুষের তালাকের মত করে নয়। অর্থাৎ স্ত্রী বিনিময়ের মাধ্যমে স্বামী থেকে তালাক চাওয়ার অধিকার রয়েছে। যেমন কোরআনে বলা হয়েছে, “তালাকে- ‘রজঈ’ হলে দুবার পর্যন্ত। তারপর হয় নিয়মানুযায়ী রাখবে, না হয় সহৃদয়তার সঙ্গে বর্জন করবে। আর নিজের দেয়া সম্পদ থেকে কিছু ফিরিয়ে নেয়া তোমাদের জন্য জায়েয নয় তাদের কাছ থেকে। কিন্তু যে ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই এ ব্যাপারে ভয় করে যে, তারা আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে, তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়, তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুত যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লক্সঘন করবে, তারাই হলো জালিম।” (সূরা বাকারা-২২৯)
উল্লিখিত আয়াতে দেখা যাচ্ছে, স্ত্রীকে দেয়া সম্পদ (দেন মোহর) ফিরিয়ে নেয়া নাজায়েজ। কোন ক্ষেত্রে স্ত্রী যদি ধন-সম্পদের বিনিময়ে তালাক নেয়, সেটাও জায়েজ। স্ত্রী যদি ধন-সম্পদের বিনিময়ে স্বামীর নিকট থেকে তালাক নেয়, তবে তাকে ‘খুলআ তালাক’ বলে। কোরআনের এ নির্দেশনার বিপরীতে বর্তমান সমাজের চিত্র খুবই ভয়াবহ। স্ত্রীকে দেন মহন দেওয়াই হয় না বরং তালাকের পর দেন মহর আদায় করার জন্য আইন আদালত পর্যন্ত গড়াতে হয়।
ভরণ পোষণের অধিকার
তালাকপ্রাপ্তা নারীর ভরণ পোষণ সম্পর্কে সূরা বাকারা ২৩১ আয়াতে বলা হয়েছে অর্থাৎ “আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দিয়ে দাও, অতঃপর তারা নির্ধারিত ইদ্দত সমাপ্ত করে নেয়, তখন তোমরা নিয়ম অনুযায়ী তাদের রেখে দাও, অথবা সহানুভূতির সাথে তাদেরকে মুক্ত করে দাও। আর তোমরা তাদের জ্বালাতন ও বাড়াবাড়ি করার উদ্দেশ্যে আটকে রেখো না। আর যারা এমন করবে, নিশ্চয়ই তারা নিজেদেরই ক্ষতি করবে।” (সূরা বাকারা-২৩১)
কোরআনের অপর একটি আয়াতে বলা হয়েছে, (সুতরাং) যে সমস্ত নারীরা (অপেক্ষা-কাল) অতিবাহিত করিতেছে, তোমরা যেমন বাস কর, তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদেরও তদনুরূপ বাস করতে দাও; এবং তাদের জীবন তিক্ত হয় এরূপ উদ্দেশ্য নিয়ে তাদেরকে হয়রান করিও না। এবং তারা সন্তানসম্ভবা হলে, সন্তান প্রসব না করা পর্যন্ত তাদের উদ্দেশ্যে মুক্ত হস্তে ব্যয় কর; (বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হওয়ার পরও) যদি তারা তোমার শিশুকে পালন করে, তাদেরকে তাদের (ন্যায্য) পরিশোধ কর; এবং (শিশুর ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে) একে অন্যের সহিত ন্যায়োচিত পরামর্শ কর। এবং (মায়ের পক্ষে শিশুকে লালপালন করিবার ব্যাপারে) যদি তোমরা কোন অসুবিধার সম্মুখীন হও, তবে তার পক্ষ থেকে অন্য কোন নারীকে শিশুটিকে লালপালন করতে নিয়োগ করো। (এই সমস্ত ব্যাপারে) যার প্রচুর সামর্থ্য আছে সে তার সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করুক; এবং যার জীবিকা নির্বাহের আর্থিক সংস্থান অতি অল্প সে আল্লাহর প্রদত্ত সামর্থ অনুযায়ীই ব্যয় করুক: আল্লাহ্ কোন মানুষকেই যা দিয়াছেন তার উপর তার অতিরিক্ত কোন ভারই ন্যস্ত করেন না (এবং এমনও হতে পারে যে) দুরবস্থার পর আল্লাহ্ স্বস্তি দান করিবেন।
কোরআনের এ দুটি আয়াত দ্বারাই তালাকপ্রাপ্তা নারীর ভরণপোষণের অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। তাদের ইদ্দত বা ঋতু¯্রাব অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের ভরণ পোষণ ও সন্তান লালন পালনের সকল খরচ স্বামীর আদায় করা কর্তব্য ও দায়িত্ব। অথচ আজ সমাজ উল্ট হওয়ায় ভাসছে। তালাক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীদের তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর এতে রয়েছেন অমঙ্গল কোরআনের এ আয়াতটির প্রতিও মানুষের বিন্দু পরিমাণ ভ্রুক্ষেপ নেই।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

তুকতাক করার অভিযোগে গ্রেফতার মালদ্বীপের নারী মন্ত্রী
মালদ্বীপের নারী মন্ত্রী ফাতিমা শামনাজ আলী সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারবিস্তারিত পড়ুন

ওডিশার প্রথম নারী মুসলিম এমএলএ সোফিয়া ফিরদৌস
ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ওডিশা থেকে প্রথম নারী ও মুসলিম এমএলএবিস্তারিত পড়ুন

গফরগাঁওয়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক শামছুন নাহার
জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ- ২০২৪ এ ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়েবিস্তারিত পড়ুন