তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ইলা মিত্রের তেভাগা আন্দোলনের ৬৭ বছর পরও যাদের জন্য এ আন্দোলন ছিল, আজো সেসব আদিবাসী কৃষকরা বঞ্চিত ও শোষিত। মূলত মোট উৎপাদিত ফসলের তিনভাগের দুইভাগ পাবে চাষী, একভাগ জমির মালিক-এই দাবি থেকেই তেভাগা আন্দোলনের সূত্রপাত। আর ১৯৪৮ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানার চণ্ডীপুর, কেন্দুয়া, কুসবাডাঙ্গা, রাউতাড়া, ধরমপুর ও ঘাসুড়া এলাকায় সংগঠিত হয় এই ঐতিহাসিক আন্দোলন। সেই আন্দোলনের মহিয়সী নেত্রী ইলা মিত্রের আজ ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী।
ইলা মিত্রের মৃত্যুবার্ষিকীর আগ মুহূর্তে সেই আন্দোলনের সহযোদ্ধা কুসবা গ্রামের চুনকা হেমরমের ভাই লাল হেমরম বলেন, ‘লাঞ্ছিত, বঞ্চিত কৃষক-শ্রমিকদের নায্য অধিকার পাইয়ে দেয়ার জন্য এ আন্দোলন হলেও আজো আদাবাসীরা জমিহারা, জোতদার কর্তৃক নিষ্পেষিত এবং বঞ্চিত রয়ে গেছে। এমনকি তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তী নেত্রী ইলামিত্রের মৃত্যুবার্ষিকী দায়সারাভাবে পালন করা হলেও তার নামে গড়ে উঠেনি তেমন কোনো প্রতিষ্ঠান।’ লাল হেমরম এ মহিয়সী নেত্রীর নামে রাস্তা-ঘাট, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল নির্মাণ করে তার আদর্শকে ধরে রাখার আহ্বান জানান।
আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা চন্দন বাবু জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষ্ণগোবিন্দপুরের জমিদার বাড়ির ছেলে রমেন মিত্রের বৌ হয়েও ইলা মিত্র খেটে খাওয়া শোষিত মানুষের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করা এ উপমহাদেশে বিরল। তাঁর মৃত্যুর পর কেন্দুয়ায় স্মৃতিসৌধ, মঠ সংস্কার, একটি রাস্তা ও পাঠাগার তৈরি করা হলেও; তার স্মৃতি বিজড়িত এলাকায় গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং তা জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী যথাযথভাবে জেলায় সর্বত্র পালনের দাবি করেন।
ইলা মিত্র গণপাঠাগার ও সংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্রের সভাপতি তোহিদুল ইসলাম জানান, জেলা পরিষদের অর্থায়নে ইলা মিত্রের নামে পাঠাগার তৈরি করা হলেও এখানে তেমন কোনো বইপত্র নেই। এমনকি লাইব্রেরি দেখাশুনার লাইব্রেরিয়ান ও পিওন না থাকায় খুব অসুবিধা হচ্ছে। তবে জেলা পরিষদের কাছে ৫শ ৭টি বইয়ের তালিকা দেয়া হলেও তা এখনো সরবরাহ করা হয়নি। এতে ইলা মিত্র ও তাঁর আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারছে না নতুন প্রজন্ম।
কেন্দুয়ার জালাল উদ্দিন জানান, তেভাগা আন্দোলনে পুলিশের নিপীড়নের মুখ বুজে সহ্য করেনি সাঁওতাল আদিবাসী ও বর্গা চাষীরা। নিজেদের অধিকার আদায়ে বীরের মতই সংগ্রাম করেছিল এ অঞ্চলের কৃষকরা। ফসলের নায্য হিস্যা বুঝে নিতে হাতে তুলে নিয়েছিল তীর-ধনুক। কিন্তু এত বছর পরও যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এই আন্দোলন আজো তারা বঞ্চিত, শোষিত। এমনকি, ইতিহাসের কিংবদন্তি এই নারী নেত্রী মাত্র ২ বছরের শিশু সন্তানকে শ্বশুর বাড়িতে রেখে নাচোলের সাঁওতাল পল্লীতে রাতদিন থেকে অধিকার আদায়ে আদিবাসী কৃষকদের সংগঠিত করে। অথচ এই মহিয়সী নারী নেত্রীর প্রকৃত মূল্যায়ন আজো হয়নি। তার স্মরণে নেয়া হয়নি প্রশাসনিকভাবে তেমন কোনো উদ্যোগও।
নাচোল উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমার জানান, ভবিষ্যতে ইলা মিত্রের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতি সংগ্রহশালা, রাস্তাঘাট ও আদিবাসীদের শোষণ, বৈষম্য দূরীকরণে প্রশাসনিকভাবে উদ্যোগ নেয়া হবে।
এদিকে, ইলা মিত্রের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে উদযাপন কমিটির উদ্যোগে নাচোলের কেন্দুয়ায় তাঁর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, গীতা পাঠ, পূজা-অর্চণা, ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, তেভাগা আন্দোলন চলাকালে ইলা মিত্র ১৯৫০ সালে ৭ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলস্টেশনে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। পরে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে কলকাতায় চলে যান এবং পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভায় সিপিএম থেকে ৪বার সদস্য নির্বচিত হন। মৃত্যুর আগে তিনি ১৯৯৬ সালে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত নাচোল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে গণসংবর্ধনায় অংশ নেন। তিনি ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
তুকতাক করার অভিযোগে গ্রেফতার মালদ্বীপের নারী মন্ত্রী
মালদ্বীপের নারী মন্ত্রী ফাতিমা শামনাজ আলী সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারবিস্তারিত পড়ুন
ওডিশার প্রথম নারী মুসলিম এমএলএ সোফিয়া ফিরদৌস
ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ওডিশা থেকে প্রথম নারী ও মুসলিম এমএলএবিস্তারিত পড়ুন
গফরগাঁওয়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক শামছুন নাহার
জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ- ২০২৪ এ ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়েবিস্তারিত পড়ুন