নামাজে সাহু সিজদা কখন দিতে হয়, কখন দিতে হয় না!
(নামাযে) কম বা বেশী করার কারণে (শেষ বৈঠকে) সালামের পর দু’টি সাজদায়ে সাহও করবে। অতঃপর তাশাহুদ পাঠ করবে এবং সালাম ফিরাবে। ইমাম শাফিঈ (র.) এর মতে সালামের আগে সাজদা করবে। কেননা বর্ণিত আছে যে, নবী (সা.) এর আগেই সাজদা সাহও করেছেন। আমাদের দলীল এই যে, নবী (সা.) এর এ উক্তি- প্রতিটি সাহও (বা ভুল) এর জন্য সালামের পর দু’টি সিজদা (আবূ দাউদ)। আরো বর্ণিত আছে যে, নবী (সা.) এর পর দুটি সাজদা সাহও করেছেন (মুসলিম ও অন্যান্য)।
এখানে তার আমল সংক্রান্ত বর্ণনা দু’টি পরস্পর বিপরীত রয়েছে। সুতরাং প্রমাণ রূপে তার বাণী গ্রহণ করা অক্ষুণ্ন থেকে যাবে। আর একারণেও যে, সাজদায়ে সাহও এক সালাতে বারংবার হয় না। সুতরাং তাকে সালাম থেকে বিলম্বিত করতে হবে, যাতে সালামের ব্যাপারে ভুল হলে সাজদায়ে সাহও দ্বারা তা পূরণ হতে পারে। (ইমাম শাফিঈ (র.) ও আমাদের মাঝে) এই মতভিন্নতা কেবল কোনটি উত্তম এ ব্যাপারে (বৈধতার প্রশ্নে নয়)। (সাজাদায়ে সাহও এর) উল্লেখিত সালামকে (নামাযের) পরিচালিত সালামের সদৃশ হিসাবে দুই সালাম সহ সাজাদা করবে। এটাই বিশূদ্ধ মত। নবী (সা.) এর উপর দুরুদ এবং দু’আ ‘সাজদায়ে সাহও’ পরবর্তী বৈঠকে পড়বে। এটাই বিশুদ্ধ মত। কেননা নামাযের শেষাংশই হল দু’আর প্রকৃত স্থান। ইমাম কুদূরী (র.) বলেন, সালাতের মধ্যে যদি এমন কোন কাজ অতিরিক্ত করে ফেলে, যা সালাত জাতীয় কিন্তু সালাতভূক্ত নয়, তবে সে ক্ষেত্রে সাজদায়ে সাহও আবশ্যক হবে। আবশ্যক দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাজদায়ে সাহও ওয়াজিব, এটাই বিশূদ্ধ মত। কেননা সাজদায়ে সাহও ওয়াজিব হয় ইবাদতে সৃষ্ট কোন ত্রুটি পূরণ করার জন্য। সুতরাং সেটা ওয়াজিব হবে। যেমন হজ্জ্বের ক্ষেত্রে দম দেওয়া ওয়াজিব। যখন এটা ওয়াজিব সাব্যস্ত হল, তখন ভুলে কোন ওয়াজিব তরক করা কিংবা বিলম্বিত করা কিংবা কোন রুকন বিলম্বিত করার কারণেই শূধু সাজদায়ে সাহও ওয়াজিব। সাজদায়ে সাহও ওয়াজিব হওয়ার কারণ এই যে, তা কোন রুকন বিলম্বিত হওয়া বা কোন ওয়াজিব তরক হ্ওয়া থেকে মুক্ত নয়।
ইমাম কুদূরী (র.) বলেন, যদি কোন ‘মাসনুন’ আমল তরক করে তবে সাজদা সাহও ওয়াজিব হবে। সম্ভবতঃ ‘মাসনূন’ দ্বারা ওয়াজিব আমল বুঝানো হয়েছে। তবে ‘মাসনূন’ বলার কারণ এই যে, তা ওয়াজিব হওয়া ‘সুন্নাহ্’ বা হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। ইমাম কুদূরী বলেন, অথবা যদি সূরাতুল ফাতিহা পড়া তরফ করে। কেননা তা ওয়াজিব।
অথবা কূনুত, তাশাহ্হুদ বা দুই ঈদের তাকবীরসমূহ যদি তরক করে। কেননা এই গুলো ওয়াজিব। এই জন্য যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) একবারও তরক না করে এগুলো অব্যাহত ভাবে পালন করেছেন। আর এটা ওয়াজিব হওয়ার আলামত। তাছাড়া এ সমস্ত আমলকে পুরা নামাযের সাথে সম্বন্ধ করা হয়। আর এ সম্বন্ধ প্রমাণ করে যে, এগুলো নামাযের সাথে বিশিষ্ট আর বিশিষ্টতা সাব্যস্ত হয় ওয়াজিব হওয়ার মাধ্যমে। তাশাহ্হুদ শব্দের উল্লেখ দ্বারা প্রথম ও দ্বিতীয় বৈঠকে উদ্দেশ্য হতে পারে। আবার উভয় বৈঠকে তাশাহ্হুদ পাঠও উদ্দেশ্য হতে পারে। কেননা এ সবই ওয়াজিব এবং তাতে সাজদায়ে সাহ্ও আবশ্যক। এটাই বিশূদ্ধ মত। আর চুপেচুপে কিরাতের ক্ষেত্রে ইমামের যদি উচ্চৈস্বরে কিরাত পড়েন, অথবা উচ্চৈস্বরে কিরাতের ক্ষেত্রে যদি চুপেচুপে পড়েন, তবে এ অবস্থায় সাজদায়ে সাহ্ও ওয়াজিব হবে। উচ্চৈস্বরের কিরাতের স্থানে উচ্চৈস্বরে কিরাত পড়া এবং চুপেচুপে কিরাত স্থানে চুপে চুপে পড়া ওয়াজিবসমূহের অন্তর্ভূক্ত। পরিমাণ সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। বিশূদ্ধতম মত এই যে, যে পরিমাণ কিরাত দ্বারা সালাত শূদ্ধ হয়, উভয় ক্ষেত্রে সে পরিমাণই বিবেচ্য। কেননা সামান্য পরিমাণ উচ্চৈস্বরে বা চুপেচুপে পাঠ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু অধিক পরিমাণ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। সেটা হল এক আয়াত আর সাহেবাইনের মতে তিন আয়াত। এটা হল ইমামের ক্ষেত্রে। একা নামায আদায়কারীর ক্ষেত্রে নয়। কেননা উচ্চৈস্বরে কিরাত পাঠ ও চুপেচুপে কিরাত পাঠ জামাআতে নামাযের বৈশিষ্ট্য।
ইমাম কুদূরী বলেন, ইমামের ভূল মুক্তাদীর উপর সাজদা ওয়াজিব করে। কেননা যার উপর নামাযের নির্ভর (ইমাম) তার উপর সাজদা ওয়াজিব হওয়ার কারণ সাব্যস্ত হয়ে গেছে। এ জন্যই মুক্তাদীর উপর মুকীম হওয়ার হুকুম সাব্যস্ত হয়ে যায় ইমামেরে নিয়্যতের কারণে। আর ইমাম যদি সাজদা না করে তবে মুক্তাদিও সাজদা করবে না। কেননা এমতাবস্থায় সে ইমামের বিরুদ্ধাচারণকারী হয়ে যাবে। অথচ সে ইমামের অনুসারী হিসাবে আদায় করার দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেছে। আর মুক্তাদী যদি ভূল করে তবে ইমাম ও সেই মুক্তাদীর উপরই সাজদা ওয়াজিব হবে না। কেননা যদি সে একা সাজদা করে তবে ইমামের বিরুদ্ধাচারণকারী হবে। পক্ষান্তরে ইমাম যদি মুক্তাদীর অনুসরণ করে তবে, যে অনুসরণীয়, সে অনুসরণকারীতে পরিণত হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি প্রথম বৈঠকে ভুলে যায়, পরে বসার অধিকতর নিকটবর্তী থাকা অবস্থায় তা স্মরণ হয়, তবে সে ফিরে বসে যাবে এবং তাশাহ্হুদ পড়বে। কেননা যা কোন নিকটবর্তী, তা ঐ জিনিসেরই অন্তর্ভূক্ত বলে গণ্য হয়। কারো কারো মতে এমতাবস্থায় বিলম্বজনিত কারণে সাজদায়ে সাহ্ও করবে। কিন্তু বিশূদ্ধতম মত এই যে, সাজদা করবে না, যেমন না্ দাঁড়ালে সাজদা করতে হয় না।
পক্ষান্তরে যদি দাঁড়ানো অবস্থার অধিকতর নিকটবর্তী হয়, তবে (বৈঠকের দিকে) ফিরে আসবে না। কেননা প্রকৃতপক্ষে সে দাড়ানো ব্যক্তির মতই। আর সে সাজদায়ে সাহ্ও করবে। কেননা সে ওয়াজিব তরক করেছে। আর যদি শেষ বৈঠক ভূলে যায়, এমন কি পণ্চম রাকাআতে দাড়িয়েঁ যায়, তবে সাজদা করার পূর্ব পর্যন্ত বৈঠকে ফিরে আসবে। কেননা এই ফিরে আসার মধ্যে তার নামাযের সংশোধন রয়েছে। আর তার জন্য এটা সম্ভব। কেননা এক রাকাআতের কম যা, তা পরিহারযোগ্য। ইমাম কুদূরী (র.) বলেন, পণ্চম রাকাআত বাতিল করে দেবে। কেননা সে এমন বিষয়ের দিকে ফিরে এসেছে, যার স্থান উক্ত রাকাআতের পূর্বে। সুতরাং তা আপনা থেকেই বাতিল হয়ে যাবে। আর সাজদা সাহ্ও করবে। কেননা সে ওয়াজিব বিলম্বিত করেছে। আর যদি পণ্চম রাকাআতের এক সাজদাও আদায় করে ফেলে তবে আমাদের মতে তার ফরজ বাতিল হয়ে যাবে। শাফিঈ (র.) ভিন্নমত পোষণ করেন। আমাদের দলীল এই যে, ফরজ নামাযের রুকনসমূহ পূর্ণ করার পূর্বেই সে তার নফল নামাযের আরম্ভ পোক্ত করে ফেলেছে। আর এটার অবশ্যম্ভাবী দাবী হল ফরজ থেকে বের হয়ে আসা। এর কারণ এই যে, এক সাজদাসহ রাকাআত আদায়কে প্রকৃত অর্থেই নামায গণ্য হয়। তাই নামায পড়বে না এমন কসমের বেলায় এক সাজদা এক রাকাআত আদায় করলে কসম ভংগ হয়ে যাবে। আর তার এই নামায নফলে পরিণত হয়ে যাবে। এটা ইমাম আবূ হানীফা (র.) ও আবূ ইউসূফ (র.) এর মত। ইমাম মুহাম্মদ (র.) ভিন্নমত পোষণ করেন। কাযা নামায অধ্যায়ে এটা আলোচিত হয়েছে। সুতরাং উক্ত রাকাআতের সাথে ষষ্ঠ রাকাআত যুক্ত করবে। যদি কোন রাকাআত যুক্ত না করে তবে তার উপর (সাজদা সাহ্ও বা কাযা) কিছুই ওয়াজিব হবে না। কেননা এটা ধারণা বশীভূত।
আবূ ইউসূফ (র.) এর মতে মাটিতে কপাল রাখা মাত্র তার ফরজ বাতিল হয়ে যাবে। কেননা এটাই পূর্ণ সাজদা। আর ইমাম মুহাম্মদ (র.) এর মতে মাথা উঠানোর পর তা বাতিল হবে। কেননা কোন কিছুর পূর্ণতা লাভ করে তার শেষাংশের মাধ্যমে। আর তা হল মাথা উঠানো। অতএব হাদাছ অবস্থায় মাথা উঠানো বিশূদ্ধ হয় না, মত ভিন্নতার ফলাফল প্রকাশ পাবে, সাজদার মাঝে হাদাছ দেখা দেবে। মুহাম্মদ (র.) এর মতে ‘বিনা’ করবে আর ইমাম আবূ ইউসূফ (র.) এর মতে বিনা করতে পারবে না। আর যদি চতুর্থ রাকাআতে বৈঠকের পর সালাম না করে দাড়িয়েঁ যায়, তবে পণ্চম রাকাআতের সাজদা না করা পর্যন্ত বৈঠকে ফিরে আসবে এবং সালাম ফিরাবে। কেননা দাঁড়ানো অবস্থায় সালাম করা বিধিসম্মত নয়। আর বৈঠকে ফিরে এসে বিধিসম্মতভাবে সালাম ফেরানো তার পক্ষে সম্ভব। কেননা এক রাকাআতের কম যা তা বর্জনীয়। আর যদি পণ্চম রাকাআতের সাজদা করার পর তার স্মরণ হয় (এবং বুঝতে পারে যে, সে পণ্চম রাকাআত অতিরিক্ত যোগ করেছে,তবে তার সাথে আরেক রাকাআত যোগ করবে। আর তার ফরজ পূর্ণ হয়ে যাবে। কেননা শূধু সালাম করা বাকী ছিল, আর তা ওয়াজিব। অন্য রাকাআত যোগ করার কারণ হল, যাতে দুই রাকাআত মিলে নফল হয়ে যায়। কেননা এক রাকাআত নফল হিসাবে যথেষ্ট নয়। নবী (সা.) বিচ্ছিন্ন এক রাকাআত সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। তবে এ দু’রাকা্আত যুহর পরবর্তী সুন্নত দু’রাকাআতের স্থলবর্তী হবে না। এ-ই বিশূ্দ্ধ মত। কেননা (নবী সা.) থেকে নতুন তাহরীমা দ্বারা এর উপর নিয়মিত আমল রয়েছে।
আর ভুলের জন্য সাজদা করবে। এটা সূক্ষ কিয়াসের দাবী। কেননা সুন্নত তরীকার বিপরীতে (ফরজ হতে) বের হওয়ার কারণে ফরযে ত্রুটি এসে গেছে। আর সুন্নত তরীকার বিপরীত (নফল সালাতে) প্রবেশের কারণে নফল সালাতেও ত্রুটি এসেছে। আর যদি এই নফল সালাত ছেড়ে দেয় তবে তার উপর কাযা আবশ্যক হবে না। কেননা এ রাকাআতটা ধারণা বশীভূত। এ রাকাদ্বয়ের কেউ যদি তার সাথে ইকতিদা করে তবে ইমাম মুহাম্মদ (র.) এর মতে সে ছয় রাকাআত পড়বে। কারণ এ তাহরীমা দ্বারা ছয় রাকাআত আদায় করা হয়েছে। আর ইমাম আবূ হানীফা (র.) ও ইমাম আবূ ইউসূফ (র.) এর মতে দু’রাকাআত আদায় করবে। কেননা ফরজ হতে তার বের হয়ে আসা পূর্ণ হয়ে গেছে। আর মুক্তাদী যদি এ সালাত ফাসিদ করে ফেলে, তবে ইমাম মুহাম্মদ (র.) এর মতে ইমামের উপর কিয়াস করে তার উপর কাযা ওয়াজিব হবে না। তা সত্ত্বেও যদি আর ইমাম আবূ ইউসূফ (র.) এর মতে (মুক্তাদীকে) দু’রাকাআত কাযা করতে হবে। কেননা কাযা রহিত হওয়ার কারণ ইমামের সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত। জামেউস-সগীর কিতাবে ইমাম মুহাম্মদ (র.) বলেন, যে ব্যক্তি দু’রাকাআত নফল পড়ল আর তাতে কোন ভূল করল এবং সাজদায়ে সাহ্ও করল, অতঃপর (একই তাহরীমার মাধ্যমে) আরও দু’রাকাআত পড়ার ইচ্ছা করল সে (পূর্ববর্তী রাকাআতদ্বয়ের উপর) ‘বিনা’ করতে পারবে না। কেননা তখন সালাতের মধ্যবর্তী স্থানে হওয়ার কারণে সাজদায়ে সাহ্ও বাতিল হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে মুসাফির যদি সাজদায়ে সাহ্ও করার পর মুকীম হওয়ার নিয়্যত করে তবে সে (পূর্ববর্তী রাকাআতদ্বয়ের উপর পরবর্তী রাকাআতের) ‘বিনা’ করতে পারবে। কেননা মুসাফির যদি ‘বিনা’ না করে তবে তার সম্পূর্ণ সালাত বাতিল হয়ে যাবে। তা সত্ত্বেও যদি সে (পরবর্তী দু’রাকাআত নফল) আদায় করে তবে তাহরীমা বাকি থাকার কারণে তা সহীহ্ হবে। কিন্তু সাজদায়ে সাহ্ও বাতিল হয়ে যাবে। এ-ই বিশূদ্ধ মত। (সুতরাং শেষে পুনঃসাজদা সাহ্ও করে নিবে)।
কেউ (সালাতের মাঝে) সালাম ফেরাল, অথচ তার যিম্মায় সাজদায়ে সাহ্ও রয়ে গেছে; এমন সময় সালামের পর কোন লোক (ইকতিদার মাধ্যমে) তার সালাতে দাখিল হল, তবে ইমাম যদি সাজদায় যায় তাহলে মুক্তাদী সালাতে শামিল গণ্য হবে। অন্যথায় সালাতে শামিল গণ্য হবে না। এটা ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসূফ (র.) এর মত। ইমাম মুহাম্মদ (র.) বলেন, ইমাম সাজদা করুন বা না করুন, মুক্তাদী সালাতে দাখিল গণ্য হবে। কেননা তাঁর মতে যার যিম্মায় সাজদায়ে সাহ্ও রয়েছে, তার সালাম মূলতঃ তাকে সালাতে থেকে বের করে না। কারণ এ সাজদা ওয়াজিব হয়েছে ক্ষতি পূরণের জন্য। সুতরাং সালাতের ইহরামে থাকা তার জন্য অপরিহার্য। ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসূফ (র.) এর মতে সালাম তাকে স্থগিতাবস্থায় সালাত থেকে বের করে। কেননা বস্তুতঃ সালাম হল সালাত থেকে বহিষ্কারকারী। কিন্তু সাজদা আদায়ে প্রয়োজনে এখানে তা কার্যকর হচ্ছে না। সুতরাং সাজদা ছাড়া এই ‘স্থগিত হওয়া’ প্রকাশ পাবে না। আর সাজদায়ে ফিরে না আসার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনের কার্যকারিতা নেই। এ মতপার্থক্যের ফলাফল আলোচ্য মাসআলায় যেমন প্রকাশ পাচ্ছে তেমনি প্রকাশ পাবে এ অবস্থায় উচ্চহাস্য দ্বারা উযূ ভংগ হওয়ার ক্ষেত্রে এবং মুকীম হওয়ার নিয়্যতি দ্বারা ফরজ পরিবর্তন হওয়ার ক্ষেত্রে। যে ব্যক্তি সালাত শেষ করার নিয়্যতে সালাম করল অথচ তার যিম্মায় সাজদায়ে ‘সাহ্ও রয়ে গেছে, তার কর্তব্য হল সাজদায়ে সাহ্ও করা। কেননা এ সালাম সালাত সমাপ্তকারী নয়। আর তার নিয়্যতের লক্ষ্য হচ্ছে শরীআত অনুমোদিত বিষয়ের পরিবর্তন। সুতরাং এ নিয়্যত বাতিল।
যে ব্যক্তি সালাত রত অবস্থায় সন্দেহগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ফলে তিন রাকাআত পড়েছে না চার রাকাআত, তা বলতে পারে না, আর এই প্রথম সে এ অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে সে পুনরায় সালাত আদায় করবে। কেননা রাসূলূল্লাহ্ (সা.) বলেছেন- তোমাদের কেউ যদি তার সালাতে সন্দিহান হয়ে পড় যে, কত রাকাআত পড়েছে? তাহলে সে যেন পুনরায় সালাত আদায় করে। আর যদি এ অবস্থা তার বহুবার হয়ে থাকে, তাহলে সে নিজের প্রবল ধারণার উপর নির্ভর করবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি তার সালাতে সন্দিহান হয়ে পড়ে, সে যেন চিন্তার মাধ্যমে কোন্টি সঠিক তা সাব্যস্ত করে। আর যদি তার কোন ধারণা না থাকে তবে নিশ্চিত (সংখ্যার) উপর নির্ভর করবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি আপন সালাতে সন্দিহান হয়ে পড়ে ফলে সে বলতে পারে না যে, তিন রাকাআত পড়েছে, না চার রাকাআত সে ‘কম’ এর উপর নির্ভর করবে। আর সালাম দ্বারা (সন্দেহগ্রস্ত সালাত শেষ করে) নতুন সালাত শুরু করা উত্তম। কেননা সালামই সালাত সমাপ্তকারী রূপে পরিচিত। কথাবার্তা দ্বারা নয়। সালাত কর্তন করার ‘নিছক নিয়্যত’ বাতিল গণ্য হবে। আর কম সংখ্যার উপর নির্ভর করার সুরতে সালাত শেষ রাকাআত হিসাবে ধারণা হয়, এমন প্রত্যেক স্থান বসবে, যেন সে ফরজ বৈঠকে তরককারী না হয়। আল্লাহ্-ই উত্তম জানেন।
মূল- শায়খুল ইসলাম বুরহান উদ্দীন আবুল হাসান আলী ইবন আবূ বকর আল-ফারগানী [রহ.]
অনুবাদ- মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ
গ্রন্থনা ও সম্পাদনা- মাওলানা মিরাজ রহমান
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ঈদের ছুটির পর বুধবার থেকে নতুন অফিস সময়সূচি
পবিত্র ঈদুল আজহার পর সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিতবিস্তারিত পড়ুন
সৌদিতে হজে বিভিন্ন দেশের ৫৫০ হাজির মৃত্যু
সৌদি আরবে এ বছর হজ পালনে গিয়ে কমপক্ষে ৫৫০ জনবিস্তারিত পড়ুন
ঈদে ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ টি গবাদিপশু কোরবানি
এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে মোট ১ কোটি ৪বিস্তারিত পড়ুন