নারী পোষাক শ্রমিকদের ৬৩% যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যায় জর্জরিত
‘তৈরি পোশাক শিল্পের ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন শ্রমিকের মধ্যে ৩ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন নারী শ্রমিক। এই বিশাল সংখ্যক নারী শ্রমিকের প্রায় ৬০ শতাংশের মধ্যে যৌন রোগ বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান নেই। ফলে ৬৩ শতাংশ নারী যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন। এর নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি পোশাকশিল্পের ওপর পড়ছে।’
বুধবার সন্ধ্যায় নেদারল্যান্ডভিত্তিক একটি উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত ‘ওয়ার্কিং উইথ উইমেন’ এর উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাজনীন আক্তার।
তৈরি পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার (এসআরএইচআর) বিষয়ে বিজিএমইএর সম্মেলন কক্ষে এ সেমিনারে আয়োজন করা হয়। এসআরএইচআর নিশ্চিত করার মাধ্যমে কীভাবে তৈরি পোশাক শিল্প খাতকে আরো সমৃদ্ধ করা যায়, সেটিই ছিল সেমিনারে মূল লক্ষ্য।
গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের যৌন ও অন্যান্য স্বাস্থ সমস্যা নিরসনে যদি ১ ডলার খরচ করা হয়, তাহলে এর বিনিময়ে ৩ ডলার ফেরত আসবে। তাই একে খরচ না বলে বিনিয়োগ বলা যেতে পারে। কারণ, এতে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে, পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতির হার কমে। ফলে উৎপাদনে সরাসরি এটির ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।’
ড. নাজনীন আক্তার তার গবেষণা প্রবন্ধে আরো বলেন, যৌন রোগের কারণে বছরে ২০ শতাংশ নারী শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকেন। ফলে কারখানাগুলোতে যে পরিমাণ উৎপাদন কম হয়, তা বছরে মোট কর্মদিবসের ১০ শতাংশের সমান। এতে এ শিল্পে বছরে প্রায় ২২ মিলিয়ন ডলার কম আয় হচ্ছে। এ কারণে দেশের সব পোশাক কারখানায় যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ইউনিট খোলার কোনো বিকল্প নেই।
ওয়ার্কিং উইথ উইমেন প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে দেশে ১৬টি কারখানায় এ ধরনের ইউনিট খুলে নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, যেসব সংগঠন নারীদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে কাজ করে, তাদের জন্য পোশাক শিল্প করখানাগুলো একটি বড় কাজের ক্ষেত্র। কারণ এক সঙ্গে এত বিশাল সংখ্যক নারীর মাঝে কাজ করার সুযোগ আর কোথাও নেই। অথচ এই সেবাগুলো পেতে ৭১ শতাংশ নারী শ্রমিক তাদের আশেপাশে ওষুধের দোকানগুলোতে যায়। আর্থিক সামর্থ্য ও সচেতনতার অভাবে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, একজন নারী যখন তার যৌন রোগের সঠিক প্রতিকার পায় না, সেটিও এক ধরনের যৌন হয়রানি। এ অধিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে কারখানার পরিবেশ অন্যতম প্রধান বাধা। অন্য বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে- নারী শ্রমিকদের জ্ঞানগত ও সামাজিক সচেতনতার অভাব।
সেমিনারে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা শরিফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বব্যপী ২৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হচ্ছে। এই শিল্পের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছে ৩ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন নারী শ্রমিক।
এ বিশাল সংক্ষক নারীকে স্বাস্থঝুঁকির মধ্যে রেখে ২০২১ সালের মধ্যে এ শিল্পকে ৫০ বিলিয়ন ডলারের শিল্পে উন্নীত করার যে স্বপ্ন আমরা দেখছি, সেটি বাস্তবায়ন করা কতটা সম্ভব হবে সেটি ভাবার সময় এসেছে।
এ সময় তিনি জানান, ওয়ার্কিং উইথ উইমেন প্রকল্পের সঙ্গে কাজ করে ডিবিএল গ্রুপ নামে একটি পোশকা কারখানা এসিআই কোম্পানির কাছ থেকে ৩১ টাকায় সেনিটারি ন্যাপকিন কিনে ১০ টাকায় নারী শ্রমিকদের কাছে বিক্রি করছে। এ ছাড়া ব্যাবিলন গ্রুপ নারী শ্রমিকদের বিনামূলে যৌন স্বাস্থ্য উপরকরণ বিতরণ করছে।
সেমিনারে বিজিএমইএর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুখ হোসেন বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পের অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে এ সমস্যাগুলো রয়ে গেছে। তবে এ ধরনের সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। তার কারখানায় নারী শ্রমিকদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য উপকরণ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
তুকতাক করার অভিযোগে গ্রেফতার মালদ্বীপের নারী মন্ত্রী
মালদ্বীপের নারী মন্ত্রী ফাতিমা শামনাজ আলী সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারবিস্তারিত পড়ুন
ওডিশার প্রথম নারী মুসলিম এমএলএ সোফিয়া ফিরদৌস
ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ওডিশা থেকে প্রথম নারী ও মুসলিম এমএলএবিস্তারিত পড়ুন
গফরগাঁওয়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক শামছুন নাহার
জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ- ২০২৪ এ ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়েবিস্তারিত পড়ুন