“প্রেমিকার স্বামী আছে, ৬ বছরের একটি মেয়েও আছে…..”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।
“আপু আমি দেখেছি শুধুমাত্র মেয়েরাই আপনার কাছে লেখে। আমি জানি না কোন ছেলের লেখা উত্তর আপনি দেবেন কিনা। কিন্তু আমার সমস্যাটা শেয়ার করার মত আর কেউ নেই।
আমি আমার চেয়ে দুই বছরের বড় বিবাহিত একজন নারীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে গেছি। এক বন্ধুর মাধ্যমে তার সাথে আমার পরিচয় হয়। সেখান থেকে বন্ধুত্ব। শুরু থেকেই আমি জানি যে সে বিবাহিতা, ওর বিয়ে হয়েছে প্রায় আট বছর। ওর ৬ বছরের একটা মেয়েও আছে। তাই আমি শুরুতে বন্ধুর বাইরে আর কিছুই ভাবিনি তাকে। সে যথেষ্ট সুন্দরী ও আকর্ষণীয়। কিন্তু সেটা আমি একজন বন্ধুর মত প্রশংসার চোখে দেখতাম। ধীরে ধীরে সে আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। তার আহবান আমি ফিরিয়ে দিতে পারি নি। একধরণের দুর্বার আকর্ষণে আমি এগিয়ে গেছি। সে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেছে আর আমি অন্ধের মত অনুসরন করেছি। দিন দিন আমার প্রতি তার ভালোবাসার গভীরতা বাড়তে থাকে। আমিও দুর্বল হতে থাকি তার প্রতি।
আমাদের এই ভালো লাগা কতটুকু শারীরিক আর কতটুকু মানসিক এটা নিয়ে সব সময় আমি খুব কনফিউজ ছিলাম। রিলেশন এর ৩/৪ মাসের মাথায় কথায় কথায় তার কাছ থেকে জানলাম বিয়ের পর তার আরো দুই জনের সাথে সম্পর্ক হয়েছিল। কিন্তু কোনটাই এত গভীর ছিল না। ফোনে কথা বলা আর দুই একবার দেখা করা পর্যন্ত ছিল। সে আমার কাছে কিছুই লুকায় না। দেরীতে হলেও বলে। ওর কথায় আমি যেটা বুঝি যে ওর স্বামীর কাছ থেকে সে পুরো মনোযোগটা পায় না আর সেখান থেকেই তার মাঝে ভালাবাসা পাবার আকাংখা তৈরি হয়েছে। ওর স্বামী বিয়ের পর অন্য এক মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়েছিল। ওর অনেক দিন সময় লেগেছিল সেটা বুঝতে। পরে ওর স্বামী দোষ স্বীকার করে ওর কাছে মাফ চায় এবং সে মাফ করেও দেয়।
আমাদের এই সম্পর্ক নিয়ে সব সময় আমি এক ধরনের ভয়ে ভুগতাম কিন্তু তার মাঝে এই সম্পর্কের অস্বাভাবিকতা কখনোই ধরা পড়েনা। আমি এক সময় এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। তখন সে চুড়ান্ত পর্যায়ের পাগলামি শুরু করে। সে যেসব শুরু করে তাতে তার অনেক ধরনের বিপদ হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়। সে বলতো আমাকে ভুলে থাকতে হলে তাকে এসবই করতে হবে। আমি সহ্য করতে পারি না। আবার ফিরে যাই তার কাছে। আমাকে পাগলের মত ভালোবাসে সে। আমিও বাসি কিন্তু যে বাস্তবতাটা আমি বুঝতে পারি, সেটা সে বুঝতে পারে না। তার মধ্যে শিশুসুলভ আচরণ খুব তীব্র। সে সব কিছুর বিনিময়ে তার বাকি জীবনটা আমার সাথে কাটাতে চায়।
আমার মা বাবা ছোটবেলা থেকে আমিকে অনেক স্বাধীনতা দিয়েছে। আমিও সেটার মূল্যায়ন করে কখনো এমন কিছু করিনি যাতে তারা কষ্ট পাবেন। এখন তারা আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছেন। আমার কোন পছন্দ থাকলে সেখানেও তারা প্রাধান্য দেবেন কিন্তু আমি যে সম্পর্কে জড়িয়ে গেছি সেটা তো তারা কিছুতেই মেনে নেবে না। আমি ভয় পাচ্ছি কোনভাবে এটা জেনে গেলে মা বাবা হয়তো একটা এক্সিডেন্ট করে ফেলতে পারেন। এদিকে আমাকে নিয়ে যে ধরনের পাগলামি সে করে সেও কোন একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে। সেটাও আমি নিতে পারবো না। আর যদি জন্মদাতা বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে সব মেনেও নেই আমার খুব ভয় করে এটা ভেবে যে তার মত করে যদি আর কাউকে ভালো না বাসতে পারি? বাকি সারাটা জীবন কি মনে একজনকে রেখে আরেকজনের সাথে কাটাবো ? আমি যদি ওকে ভুলতে না পারি ?
এখন মা বাবা চোখের সামনে আছেন। তাদের দিকে তাকিয়ে হয়তো কষ্ট চেপে রাখার চেষ্টা করলাম। তারা দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবার পর আমি যদি আর সহ্য করতে না পারি ? তখন আমার জীবনটা আরো বেশি জটিল হয়ে পড়বে না ? ওর সন্তানের কথা ভেবেও ভয় হয়। ওর জীবনটা কি আমি নষ্ট করছি ? যদি আমি ওকে মেনে নিলেও বড় হবার পর সে কি পারবে আমাকে মেনে নিতে ? আমি যেখান থেকেই চিন্তা করি কোন কূল কিনারা খুজে পাই না। কী করবো আমি ?”
পরামর্শ:
আপনার চিঠিটি পড়ে খুব কষ্ট হলো ভাই। আপনি আসলে বেশ বড় একটা জটিলতায় জড়িয়ে পড়েছেন, যার পরিণাম হয়তো খুব একটা ভালো হবে না।
প্রথমেই বলি, আপনারা যে সম্পর্কে আছেন এটাকে যতই ভালোবাসার নাম দিন না কেন, ব্যাপারটা কিন্তু পরকীয়া। সমাজের চোখে পরকীয়া, বিবেকের চোখেও পরকীয়া। ভদ্রমহিলার স্বামী একটা ভুল করেছিলেন, সেটার জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন। এখন কিন্তু তিনি কোন পরকীয়া করছেন না। তাহলে স্ত্রী হিসাবে তাঁর কি উচিত হচ্ছে স্বামীকে ধোঁকা দেয়া? আপনার স্ত্রী যদি আপনার সাথে এমন করতেন, আপনার কি ভালো লাগতো? আরও বড় প্রশ্ন হচ্ছে, স্বামী ভদ্রমহিলার এতই অপছন্দ যখন, তাহলে স্বামীকে ছেড়ে চলে যান নি কেন? আপনি নিশ্চয়ই আরেকজনের বউকে ভাগিয়ে নেবেন না। আপনার স্ত্রী হতে গেলে তাঁকে প্রথমে স্বামীকে ডিভোর্স দিতে হবে, স্বামীর সংসার ত্যাগ করতে হবে। তবেই না আপনি তাঁকে বিয়ের জন্য এগোতে পারবেন। স্বামীর সংসারে থেকেই আরেকজনকে স্বপ্ন দেখানো মোটেও কোন উচিত কাজ নয় ভাই, যা আপনার প্রেমিকা করছেন।
পুরুষ হিসাবে আপনিও জানেন যে একজন কর্মজীবী পুরুষের পক্ষে সারাক্ষণ স্ত্রীর নামের মালা জপ করা সম্ভব না। সংসার শুরু হলে কেউ সেটা পারেও না। আপনার প্রেমিকা কিন্তু ইতিমধ্যেই দুটি পরকীয়া করে ফেলেছেন, আপনি ৩ নম্বর। কি গ্যারান্টি আছে যে বিয়ের পর আপনার সময় না পেলে তিনি আবার অন্যদিকে জড়িয়ে যাবেন না? সবচাইতে বড় কথা, আপনি যেমন বলছেন, এমন অতি আবেগী মহিলারা কখনোই আবেগ সংযত করতে পারে না। একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়াটা তাঁদের জীবনে ঘটেই। তিনি যদি সত্যিই আপনার ভালো চাইতেন, আপনাকে সরে যেতে দিতেন। ইমোশোনাল ব্ল্যাক মেইল করে কখনোই আপনাকে ধরে রাখতে চাইতেন না। একটা কথা জেনে রাখুন ভাই। ভদ্রমহিলা একা, আপনার স্থানী অন্য যে কোন পুরুষই যদি তাঁকে বেশী সময় দিত, তিনি তাঁকেও এভাবেই ভালবাসতেন। সামীর ঘোরে থেকে আরেক পুরুষের সাথে পরকীয়া চালানো খুব সোজা, কিংবা অন্যের স্ত্রীর সাথে পরকীয়া করে ফেলাও খুব সোজা। কিন্তু কঠিন হচ্ছে, সেই পরকীয়ার সম্পর্ককে বৈধ সম্পর্কে রূপান্তর করে সেটাকে রক্ষা করা। স্বামীকে এতই অপছন্দ, আপনাকে এতই ভালোবাসেন, তারপরও স্বামীর ঘরই করছেন কেন- এটা একটা বড় প্রশ্ন।
আপনার মা বাবার দিকটি আপনি আমার চাইতে ভালো জানেন। তাঁদের প্রতিক্রিয়া কী হবে ভালোই বুঝতে পারছেন। সাথে আরেকটি কথা বলি, আপনার প্রেমিকার মেয়েটির বয়স কিন্তু ৬ বছর। অর্থাৎ সে সবই বোঝে, নিজের পিতাকে খুব ভালো করে চেনে। আপনি তাঁকে মেনে নিলেও এই শিশুটি কখনো আপনাকে মেনে নেবে না। বরং আপনার কারণে সে নিজের বাবাকে হারিয়েছে, এই তীব্র ঘৃণা নিয়ে সে বড় হবে। প্লাস, আপনার কোন অধিকার নেই একটি শিশুকে তাঁর পিতার কাছ থেকে আলাদা করার। আর আপনি যে ভয় পাচ্ছেন যে আপনি না থাকলে আপনার প্রেমিকা নিজের সাথে খারাপ কিছু করে বসবে, এই ভয়টি অমূলক। তিনি আপনাকে ভয় দেখাবেন, কিন্তু দিন শেষে আসলে কিছুই করবেন না। আপনার জন্য কষ্ট সহ্য করার সৎ ইচ্ছা থাকলে তিনি বহু আগেই এই সংসার ত্যাগ করে আপনার অপেক্ষা করতেন, নিশ্চিত জীবনের খোঁজে স্বামীর সংসারে থাকতেন না।
এখন সিদ্ধান্ত আপনার ভাই। কিন্তু আমার মনে হয় আপনি এই সম্পর্ক ত্যাগ করুন। কারণ আমার ধারণা এই বিয়ে করলে আপনি হারাবেনই বেশী। ধরুন মা বাবাকে কষ্ট দিয়ে বিয়েটা করেই ফেললেন, কিন্তু আপনার প্রেমিকা যেমন চঞ্চলমতি সেক্ষেত্রে বিয়ের পর সমস্যা আরও অনেক বাড়বে। মানসিক ভাবে ক্রমাগত চাপে থাকতে একজন মানুষ পারে না, সেটা আপনাকে সবসময় থাকতে হবে। তাছাড়া, আপনার প্রেমিকার স্বামী কিন্তু একবারই পরকীয়া করেছেন, স্ত্রীর মত একাধিক না। সেই ভদ্রলোক ও বাচ্চাটির সাথে অবিচার করার অধিকার আপনার নেই।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
আমি কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক বা আইনজীবী নই। কেবলই একজন সাধারণ লেখক আমি, যিনি বন্ধুর মত সমস্যাটি শুনতে পারেন ও তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু পরামর্শ দিতে পারেন। পরামর্শ গুলো কাউকে মানতেই হবে এমন কোন কথা নেই। কেউ যদি নতুন কোন দিক নির্দেশনা পান বা নিজের সমস্যাটি বলতে পেরে কারো মন হালকা লাগে, সেটুকুই আমাদের সার্থকতা।
ছবিটি রূপক, ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
তুকতাক করার অভিযোগে গ্রেফতার মালদ্বীপের নারী মন্ত্রী
মালদ্বীপের নারী মন্ত্রী ফাতিমা শামনাজ আলী সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারবিস্তারিত পড়ুন
ওডিশার প্রথম নারী মুসলিম এমএলএ সোফিয়া ফিরদৌস
ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ওডিশা থেকে প্রথম নারী ও মুসলিম এমএলএবিস্তারিত পড়ুন
গফরগাঁওয়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক শামছুন নাহার
জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ- ২০২৪ এ ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়েবিস্তারিত পড়ুন