সোমবার, নভেম্বর ২৫, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

ভারতে ৯০ হাজার বাংলাদেশে ১২ লাখ!

বাংলাদেশ বিমানে কলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম। আধা ঘণ্টার ফ্লাইট, তিন ঘণ্টা লেট। নজিরবিহীন নৈরাজ্যকর প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। আজকের লেখার বিষয় সেটা নয়। কলকাতা বিমানবন্দরে কথা হলো কয়েকজন ভারতীয়ের সঙ্গে। যারা বাংলাদেশ বিমানের যাত্রী। তাদের একজনের সঙ্গে কথোপকথন।
কোথায় যাবেন?

সৌদি আরব, রিয়াদ।
প্রথমবার যাচ্ছেন?
না, ২০১২ সালে গিয়েছিলাম। এক মাসের ছুটিতে এসেছিলাম, আবার তিন বছরের জন্য যাচ্ছি।
কত টাকা খরচ হয়েছিল যাওয়ার সময়?
৮০ হাজার।
মোট ৮০ হাজার?
হ্যাঁ, সব মিলিয়ে ৮০ হাজার।
এখন কত টাকা লাগে?

এবার তো কোনও টাকা লাগছে না। বিমানের ভাড়া কোম্পানি দিচ্ছে। ভিসা তো ওখান থেকেই ঠিক করে এসেছিলাম।
ভারত থেকে এখন লোক যাচ্ছে সৌদি আরবে?
হ্যাঁ, প্রতিদিন যাচ্ছে। অনেক যাচ্ছে।
তাদের যেতে কত টাকা খরচ হয়?

এখন খরচ হয় ৯০ হাজার টাকা। গত মাসে আমার এক আত্মীয়কে পাঠিয়েছি জেদ্দা।
আপনি কী করবেন, তিন বছর পর ফিরে এসে আবার যাবেন?
না, ফিরে এসে আর যাব না। দেশেই কিছু করব।
দেশে জমি কিনেছেন?
না, জমি কিনিনি। আমরা খুব গরিব তো। ঘর ছিল না। পাকা ঘর করেছি। বাইক কিনেছি। ছোট ভাই পড়ছে। এবার জমি কিনব। ফিরে এসে ছোটখাটো ব্যবসা করব।
কত টাকা আয় হয় মাসে?

ওভারটাইম মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকার মতো।

ভারতীয় এই সৌদি প্রবাসীকর্মীর সঙ্গে আলোচনার দু’টি দিক। একটির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রবাসী কর্মীদের হুবহু মিল। আরেকটির সঙ্গে বিশাল ফারাক। বাংলাদেশের প্রবাসীকর্মীদেরও প্রায় সবাই প্রথমে ঘরবাড়ি তৈরির পেছনে আয়ের সিংহভাগ ব্যয় করেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারতের বাস্তবতা প্রায় একই রকম। পার্থক্য বা অমিলটা হলো, যাওয়ার খরচের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশ থেকে এখন একজন কর্মীর সৌদি আরবে যেতে খরচ হয়, খুব কম হলে ৮ লাখ টাকা, যা ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত গড়ায়।

২.
বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে গিয়ে একজন কর্মী মাসে আয় করে থাকেন ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ৩০ হাজার টাকা আয় করা কর্মীর সংখ্যা খুবই কম। গড়ে ১৫ হাজার টাকার মতো আয় করেন। নিজেরা খুব হিসেবি জীবনযাপন করে দেশে অর্থ পাঠান।
সবাই না হলেও, মধ্যপ্রাচ্য বা মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত কর্মীদের অনেকেই খুব কষ্টকর জীবনযাপন করে দেশে অর্থ পাঠান।
একজন কর্মী যদি মাসে ১৫ হাজার টাকা আয় করেন, আর যেতে যদি ১২ লাখ টাকা খরচ হয়, তাহলে হিসাবটা কেমন দাঁড়ালো? তিনি যাচ্ছেন ২ বা ৩ বছরের চুক্তিতে।

অধিকাংশেরই চুক্তির মেয়াদ আর বৃদ্ধি হয় না। ৩ বছরে তিনি আয় করতে পারবেন ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। তার থেকে সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা হয়ত পাঠাতে পারেন দেশে। তিনি খরচ তো করে গেছেন ১২ লাখ টাকা! যাওয়ার আগে এই টাকা জোগাড় করেছেন জমি বিক্রি করে, আত্মীয়স্বজনের থেকে লোন করে। স্বপ্ন দেখেছেন সৌদি আরবে গিয়ে অনেক টাকা (কত টাকা তিনি জানেন না) আয় করবেন। লোন শোধ করে দেবেন।

বাস্তবতার মুখোমুখি হন সৌদি আরবে গিয়ে। যা বেতন পাবেন বলে জেনে গিয়েছিলেন, হয়ত তার অর্ধেক বেতনে কাজ শুরু করতে হয়। অনেকে আবার কাজই পান না। দেশ থেকে টাকা পাঠানোর তাড়া। নিজে কী অবস্থায় আছেন, বলতেও পারেন না।
দেশের বাবা-মা, ভাই-বোন-স্ত্রী-সন্তান বাস্তবতা বুঝতে পারেন না, বুঝতে চানও না। এত কষ্ট করে পাঠানো টাকা দিয়ে তারা বাড়িতে বিল্ডিং তোলেন, মোটরসাইকেল কেনেন।

৩ বছর পরে যার ফিরে আসার কথা ছিল, মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান যার অপেক্ষায়, তার আর ফেরা হয় না। দেশে ফিরে কী করবেন! এখনও তো ৬ লাখ টাকা দেনা! চুক্তির মেয়াদও বাড়ে না। পাসপোর্ট কোম্পানির কাছে। এক পর্যায়ে পাসপোর্ট রেখেই অন্যত্র চলে যান। আইনের ভাষায় তিনি হয়ে যান অবৈধ। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অন্য বাংলাদেশিদের সহায়তায় কোথাও কাজ জোটে, অনেকে ভালো আয় করেন, অনেকে আবার নিয়মিত কাজই পান না।

পুলিশের ভয়ে লুকানো জীবন সংগ্রাম চলতে থাকে। সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসে ইচ্ছে করলেই যেতে পারেন না। অনেক কষ্টে একদিন গেলেও ভেতরে ঢোকার অনুমতি মেলে না। পাসপোর্ট সংক্রান্ত ব্যাপারে তার কী করণীয়, দূতাবাস থেকে কোনও সহায়তা পাবেন কিনা, তা তিনি বুঝতে পারেন না।

দূতাবাসের কর্মকর্তারা প্রবাসী এই মানুষগুলোকে ‘মানুষই’ মনে করেন না, সহায়তা তো দূরের কথা! দিন-মাস-বছর পেরিয়ে যায়, কারও কারও জীবনই কেটে যায়, দেশে আর ফেরা হয় না। অনেককে পুলিশ ধরে ফেরত পাঠায়। অনেকে ‘যা হওয়ার হবে’ নীতি নিয়ে ফিরে এসে দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হন।

এটা একটা চিত্র। এর বাইরে বড় একটা অংশ আছে, যারা দেশ-প্রবাস মিলিয়ে ভালো আছেন। এই লেখায় বলছি তাদের কথা, যারা ভালো নেই।

৩.
বাংলাদেশ থেকে একজন কর্মীর সৌদি আরব যেতে কেন ১২ লাখ টাকা খরচ হয়? যেখানে ভারতে খরচ হয় মাত্র ৯০ হাজার টাকা! নেপাল থেকে যেতেও খরচ হয় ৮০ বা ৯০ হাজার টাকা। বাংলাদেশ থেকে এত বেশি খরচ হওয়ার কারণ কী? প্রধান কারণ বাংলাদেশ সরকারের উদাসীন দুর্নীতিগ্রস্ত নীতি। মন্ত্রণালয় পুরোপুরিভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস অনিয়মে জর্জরিত। লোক পাঠানোর অধিকাংশ এজেন্সি কার্যত প্রতারক। এই প্রতারক চক্র, মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ফেলেছে।

বাংলাদেশ সরকারের কাগজে কলমের হিসাবে একজন কর্মীর যেতে খরচ হওয়ার কথা ১৮ হাজার টাকার মতো। কারণ কর্মীর যাওয়া-আসার বিমানের ভাড়া নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান দিয়ে থাকে। কাগজের ১৮ হাজার টাকা যখন ১২ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকে, বোঝা যায় অনিয়ম দুর্নীতির বিস্তার কতটা ভয়াবহ। সৌদি আরবের দু’টি চক্র, দূতাবাস, মন্ত্রণালয়, ক্ষমতাসীনদের কাছের কিছু ব্যক্তি, কর্মী পাঠানোর এজেন্সি, সবাই অনিয়মের অংশীদার। আর অনিয়মের ভুক্তভোগী সাধারণ জনমানুষ, দরিদ্র মানুষ। জমি, বসতবাড়ি বিক্রি করে যারা প্রবাসে যান ভাগ্য বদলের আশায়।

৪.
সৌদি আরবে ঠিক কত বাংলাদেশি আছেন? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর বাংলাদেশ সরকারের কাছে নেই। উত্তর নেই সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছেও। একই রকমভাবে মালয়েশিয়া বা পৃথিবীর অন্য কোনও দেশে কত বাংলাদেশি আছেন, বাংলাদেশ সরকার বা সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের কাছে সঠিক কোনও তথ্য নেই। অনুমানভিত্তিক একটি সংখ্যা আছে।

বাংলাদেশের সব সরকার প্রবাসীদের নিয়ে গর্ব করেন। আসলে গর্ব প্রবাসীদের নিয়ে করেন না, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ নিয়ে গর্ব করেন। ধারণা করা হয় কম-বেশি প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছেন। এর মধ্যে শুধু সৌদি আরবেই আছেন ২৫ থেকে ৩৫ লাখ। এসব মানুষ দেশের বাইরে গেছেন, প্রায় সম্পূর্ণ নিজেদের চেষ্টায়। এখানে সরকারগুলোর ভূমিকা খুবই নগণ্য।

প্রবাসী আয়, যা নিয়ে আমাদের সরকারগুলোর গর্বের শেষ নেই, সেই আয়ে সরকারের প্রায় কোনও ভূমিকা নেই। সরকার যদি প্রবাসীদের পাশে দাঁড়াত, আয় আরও অনেক বাড়ত। সরকার তা করে না। সুতরাং এক্ষেত্রে সরকারের কৃতিত্ব দাবি করার কোনও সুযোগ নেই।

প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ ভারত, শ্রীলঙ্কা নিয়ে যায় সরকারের ভুল নীতির কারণে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের আমানতকারী হিসেবেও সরকার সততার পরিচয় দিতে পারেনি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চুরি হয়ে গেছে, সরকার ঠেকাতে পারেনি।
চোর শনাক্ত করেনি, ব্যবস্থা নেয়নি। তদন্ত রিপোর্ট চাপা দিয়ে রেখেছে, চোর যেন শনাক্ত না হয়, ধরা না পড়ে।

৫.
একটা ঘটনা বলে লেখা শেষ করি। একজন সৌদি রাজপুত্র বাংলাদেশে আসলেন। তার প্রতিষ্ঠানের জন্যে ২ হাজার কর্মী নেবেন জরুরি ভিত্তিতে। বিমান ভাড়া রাজপুত্রের প্রতিষ্ঠান দেবে, তবে কর্মী সৌদি আরবে যাওয়ার পরে। স্থানীয় এজেন্টরা এই রিস্ক নিতে রাজি না। রাজপুত্র যদি টাকা না পাঠান! রাজপুত্র ঢাকাস্থ সৌদি রাষ্ট্রদূতকে দায়িত্ব দিয়েছেন, কিন্তু তিনি কর্মী পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারছেন না।

রাষ্ট্রদূতের চাকরি যায় যায় অবস্থা। সৌদি রাষ্ট্রদূতের যোগাযোগ হলো, সেই সময়ের এক তরুণের সঙ্গে। যিনি ছাত্র রাজনীতিতে পদ বঞ্চিত হয়ে, জনশক্তি রফতানি ব্যবসায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছিলেন। রাজপুত্রের শর্তে রাজি হয়ে গেলেন সেই তরুণ। শর্ত দিলেন, কর্মীরা যে ফ্লাইটে যাবেন, ফিরতি ফ্লাইটে টাকা পাঠাতে হবে, ক্যাশ টাকা। রাজপুত্র পছন্দ করলেন এই তরুণকে, রাজিও হলেন তরুণের শর্তে।

কিন্তু ক্যাশ টাকা তো পাঠানোর নিয়ম নেই, কিভাবে ফ্লাইটে টাকা আসবে? রাজপুত্র শরণাপন্ন হলেন, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের। মৌখিক অনুমতি মিলে গেল, এয়ারপোর্ট দিয়েই টাকা আসবে। তরুণ ব্যবসায়ী কোনও বাধার সম্মুখীন হবেন না। এই তরুণের হাত দিয়ে এয়ারক্রাফট ভর্তি হয়ে বাংলাদেশ থেকে সেই যে কর্মী যাওয়া শুরু হয়েছিল, তা অব্যাহত ছিল অনেক বছর পর্যন্ত।
তারপর অনেক নিয়মনীতি হয়েছে। তবে ‘অনিয়ম’ই এক নম্বর অবস্থান দখল করে রেখেছে। সেই তরুণ, আজ বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ধনী!

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?