মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিমানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করুন | বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আগেই বলেছি জনাব রাশেদ খান মেননরা মরতে জানেন, ক্ষমতা ছাড়তে বা পদত্যাগ করতে জানেন না। স্বার্থ, অর্থই তাদের কাছে প্রধান।
আপনার বিমানে গোলযোগ মনুষ্যসৃষ্ট স্বীকার করে দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ না করায় দেশবাসী চরমভাবে ক্ষুব্ধ। জনাব মেননরা চিরকাল আপনার বাবার বিরুদ্ধে ছিলেন, এখনো আমাদের বিরোধী। বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকে ষড়যন্ত্র করে আপনাকে হত্যা করবেন, তা হতে পারে না। তাই অনতিবিলম্বে তাকে বরখাস্ত করুন। আর তা না করলে আপনি তো জানেনই, যে পতাকায় আমার রক্ত মাখা সেই পতাকা উড়িয়ে আপনাকে হত্যা করতে দেব না। এই স্বাধীনতার মাসে না পারলেও নতুন বছর প্রকাশ্য রাস্তায় দাঁড় করে ব্যর্থ মন্ত্রীর গাড়ি থেকে পতাকা খুলে নেব। দয়া করে বিষয়টি একটু ভেবে দেখবেন।
২০১৬ সালের বিজয় দিবসে নিউজ টোয়েন্টিফোর একটি প্রতিবেদন প্রচারে বেশ কদিন থেকে চেষ্টা করছিল। আমার তেমন আগ্রহ ছিল না। গত কয়েক বছর পত্রপত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশনে শিরোনাম হতে ভালো লাগে না। তাই ক্যামেরায় ধরা দিই না, পত্রিকায় যাই না। সপ্তাহে একবার লিখি। তাও কত কথা, কত কী। আমার হিমালয়ের মতো ভারী বজ মাঝে মাঝে কেরামতি করে শোলার মতো পাতলা ‘বজ’ বানিয়ে ফেলে। কখনোসখনো মনে হয় কাজটা ইচ্ছা করেই করে। কারণ স্বাধীনতাবিরোধীরা আমাকে দেখতে পারে না, অতি আওয়ামী লীগাররাও না। প্রকৃত বঙ্গবন্ধুপ্রেমী কজনই বা আছেন যে আমাকে নিয়ে একটু দরদ দিয়ে ভাববেন। সমাজের উচ্চপর্যায়ে আমার তেমন কেউ নেই। সেখানে বড়ই অসহায়। আমি দাঁড়িয়ে আছি মাটির ওপরে সাধারণ মানুষের উজাড় করা ভালোবাসায়। নঈম নিজামকে বহু বছর স্নেহ করি, ভালোবাসি। প্রতিবেদনের জন্য আমার মেয়ের মতো চমৎকার এক মেয়ে পাঠিয়েছিল। মেয়েটির মনে হয় লেখাপড়া আছে। কিন্তু সে তেমন তৈরি হয়ে আমার কাছে আসেনি তাই কেমন যেন লেগেছে। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রতিবেদন ছেপেছে। কত ভালো ভালো ছবি আছে তাদের কাছে, কিন্তু কী উদ্দেশ্যে তারা এক চাপাভাঙা ছবি ছাপে বলতে পারব না। যারা কলকাঠি নাড়ান তারাই জানেন। প্রতিবেদক লিখেছেন, ‘বাঘা সিদ্দিকী বললেন, হাত মেলাব না নিয়াজির সঙ্গে। বাঘা সিদ্দিকী বলে খ্যাত বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম ’৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পরাজিত পাকিস্তান বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের আগে তাদের কমান্ডার জেনারেল নিয়াজি করমর্দনের জন্য হাত মেলাতে চাইলেও তিনি মেলাননি। টিভি চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ১৬ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা বিমানবন্দরে পরিচিত হওয়ার পর নিয়াজি দাঁড়িয়ে স্যালুট করেন। ’
ভদ্রমহিলা চ্যানেলের জন্য সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। আমার কথাগুলো তিনি রেকর্ড করেছেন। তার পরও গুছিয়ে লিখতে পারেননি। বাংলাদেশ প্রতিদিনে আমার সম্পর্কে কোনো লেখা বা খবর দেখলেই অনেকে মনে করেন লেখাটা আমি লিখেছি। আমি অমন অসংলগ্ন, খাপছাড়া লেখা লিখতে যাব কেন? প্রকৃত ঘটনা ছিল সকাল সাড়ে ৮টায় একজন মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর তিন সদস্যের হাতে নিয়াজিকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। সাদা পতাকা না থাকায় একটা সাদা শার্ট জিপে লটকে তারা নিয়াজির গুহায় গিয়েছিল। নিয়াজি আত্মসমর্পণ করবেন শুনে দূতেরা অতিরিক্ত খুশি হয়ে বাতাসে উড়ে ফিরেছিল। কখন জিপে লটকানো সাদা শার্টটি উড়ে গিয়েছিল বুঝতে পারেনি। যে কারণে আমাদের দিক থেকে গুলি চলে। যাতে চার দূতের তিনজন শহীদ হয়, অন্যজন গুরুতর আহত অবস্থায় আত্মসমর্পণের কথা জানায়। একটু পরে সিভিল আর্মড ফোর্সের মেজর জেনারেল জামশেদ এসে আমিনবাজারের লাল পলাশের নিচে প্রাথমিক আত্মসমর্পণ করে। আমরা যাই ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ফোরটিন ডিভিশন হেডকোয়ার্টারে নিয়াজির খাঁচায়। তিনি তখন খাঁচায় ছিলেন না। তিনি তখন ছিলেন খাঁচার আরও অনেক মাটির নিচে। খবর পেয়ে খাঁচায় এসে আমাদের সটান স্যালুট করেন। জেনারেল নাগরা ও নিয়াজি ব্রিটিশ আর্মিতে একই সঙ্গে কমিশন পেয়েছিলেন। তিনি ব্রি. সানসিং বাবাজি ও ব্রি. ক্লের-এর পরিচয় শেষে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি বলেন, ‘এবার যার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি তিনি তোমার পরম বন্ধু। যার জন্য এক রাতও নির্বিঘ্নে ঘুমাতে পারোনি। এই সেই টাইগার সিদ্দিকী। ’ টাইগার নিয়াজি তড়াক করে উঠে আবার স্যালুট করে হাত বাড়িয়ে দেন। ক্ষোভে-ঘৃণায় মুহূর্তে আমার শরীর ঘেমে গিয়েছিল। নাগরা বলছিলেন, ‘কী করছ টাইগার! পরাজিতের সঙ্গে বিজয়ীর হাত মেলানো বীরত্ব। ’ জেনারেল নাগরার বার বার অনুরোধে বলেছিলাম, না, এই নারীর ইজ্জত হরণকারী, খুনির সঙ্গে হাত মেলাতে দেশে মানুষ আমাকে অধিকার দেয়নি। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন না। আমি এই নারীঘাতী খুনির সঙ্গে কখনো হাত মেলাতে পারি না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘কাদের সিদ্দিকী বলেন, জেনারেল অরোরা কেবল এ কে খন্দকারকে নিয়ে বিমানবন্দরে নামেন। এরপর তারা যান নিয়াজিকে রিসিভ করতে। নিয়াজির গাড়িতে পাকিস্তানি পতাকা ছিল। অরোরা যখন গাড়িতে ওঠেন তখন নিয়াজির গাড়িতে ভারতীয় পতাকা লাগানো হয়। ঢাকা বিমানবন্দরে আমার মনে হয়েছিল তাহলে কি আমরা পাকিস্তানের পতাকা বাদ দিয়ে ভারতের পতাকা লাগালাম!’ প্রতিবেদক আমার কথা বুঝতে পারেননি অথবা ধরতে পারেননি। অরোরা শুধু এ কে খন্দকারকে নিয়ে আসেননি। তিনি ২৬টি হেলিকপ্টারে বহু জেনারেল, সাংবাদিক, কর্মকর্তা নিয়ে এসেছিলেন। সেখানে এ কে খন্দকারও ছিলেন। ঢাকায় এসে জেনারেল অরোরা কেন নিয়াজিকে রিসিভ করতে যাবেন? আমরা বিজয়ীরা অরোরাকে রিসিভ করার জন্য বিমানবন্দরে অপেক্ষায় ছিলাম। সেখানে জেনারেল টাইগার নিয়াজি অসহায় এতিমের মতো নতজানু হয়ে অপেক্ষায় ছিলেন। সেটাই নিয়ম, তাই তিনি করেছেন। নিয়াজির গাড়িতে অরোরা ও জেনারেল ফ্ল্যাগের প্রসঙ্গও পরিষ্কার হয়নি। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে অরোরাকে রিসিভ করার জন্য যখন বন্দী নিয়াজিকে তেজগাঁও বিমানবন্দরে আনা হয় তখন নিয়াজির গাড়িতে পাকিস্তানি জেনারেল ফ্ল্যাগ ছিল। অরোরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার জন্য যখন গাড়িতে ওঠেন তখন পাকিস্তানি জেনারেল ফ্ল্যাগ খুলে ভারতীয় জেনারেল ফ্ল্যাগ লাগানো হয়। সকালের দিকে আমিনবাজারেও ওই একই রকম করা হয়েছিল। কিন্তু তখন চরম উত্তেজনায় ব্যাপারটা তেমন খারাপ লাগেনি। কিন্তু পাকিস্তান সারেন্ডার করছে এটা জানার পর কেমন যেন লাগছিল। তাই বলেছি আমরা না হয় অনভিজ্ঞ ছিলাম, আমাদের নেতারা না হয় সজাগ ছিলেন না, কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষের তো অভিজ্ঞতার অভাব ছিল না। একটা যুদ্ধ চলছে, যুদ্ধের সময় উভয় পক্ষের কথাবার্তা হয়, বৈঠক হয় তার জন্য পতাকা লাগে। যৌথবাহিনী যখন গঠিত হলো তখন যৌথবাহিনীর একটা পতাকা বানানো হলো না কেন? প্রশ্নটা আমার মনে জেগেছিল, যা আজও জাগে, কেন আমরা পাকিস্তানের জেনারেল ফ্ল্যাগ সরিয়ে ভারতীয় জেনারেল ফ্ল্যাগ ব্যবহার করলাম? আমরা তো পাকিস্তানকে সরিয়ে ভারতকে আনতে চাইনি। আমরা স্বাধীন সার্বভৌম হতে চেয়েছি। তবে কেন এমন হলো? এমন হাজারো প্রশ্ন তাড়িয়ে বেড়াত। পিতা ছিলেন বলার জায়গা ছিল। আজ সেই বলার জায়গাও নেই। তাই চারদিকে বড় বেশি অশান্তি। ঢাকার আত্মসমর্পণে আমাদের প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানী ছিলেন না। ইতিহাসের কাছে আমরা কত বড় কাঙাল হলাম। হাজার বছর পর এর দায় নিতে হবে, কলঙ্কে মাথা নিচু হয়ে যাবে। সেদিন কেউ আমাদের ক্ষমা করবেন না। কোনো মাফ পাওয়া যাবে না। কেন প্রধান সেনাপতি ছিলেন না, জবাব দিতে হবে। নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। নগদ যা পাও হাত পেতে নাও, বাকির খাতায় পড়ে থাক শূন্য— এভাবে এখন চললেও তখন চলবে না।
আমাদের দেশে কোনো ঘটনা কয়েক দিন গেলে সব ভুলে যাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের মৃত্যু অসাধারণ নাড়া দিয়েছিল। জানাজায় তিল ধরার জায়গা ছিল না। পত্রপত্রিকায় কত কথা, কত আলোচনা। কিন্তু আমার মন থেকে কেন যেন খুঁতখুঁতি যাচ্ছে না। শাকিল হোটেলে থাকল কেন? সেখানে মারা গেল কেন? তাহলে কি বাড়িতে বনিবনা ছিল না? জীবনের ৭০ বছর পার করে এনেছি। ছোটবেলায় বাবা-মা, ভাইবোনদের নজরবন্দি ছিলাম। বড় হয়ে পুত্র-কন্যা-স্ত্রীর নজরবন্দি। ঢাকায় এক রাত অকারণ বাইরে থাকলে ছেলেমেয়ে ছাড়বে? স্ত্রী ছাড়বে? তাদের লাঠি নিয়ে বেরোতে হবে না, কেন বাড়ির বাইরে? যথাযথ উত্তর দিতে না পারলে তাদের চেতনার আঘাতেই খণ্ড খণ্ড হয়ে যাব। বিলেতে মেয়ে আছে, কানাডায় বোন, লন্ডন-আমেরিকায় ভাই, গুলশানে পিতার মতো বড় ভাই জানতে চাইবে না— বজ কেন বাইরে? জবাব কী? আমার তো পারিবারিক ব্যাপার। কিন্তু শাকিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সহকারী। সে যে রাষ্ট্রের নজরদারির বাইরে একটা রেস্টুরেন্টে ঘুমিয়ে পড়ল, সেখানে মারা গেল গোয়েন্দারা চোখ রাখল না। উগ্রবাদীরা শাকিলকে ধরে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সব তথ্য যদি বের করে নিত কী করার ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হতো না? রাষ্ট্রের গোপনীয়তা নষ্ট হওয়ার ভয় ছিল না? গোয়েন্দারা কি শুধু দেশদ্রোহী জঙ্গিবাদীদের ওপর নজর রাখে, নাকি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জানমাল হেফাজতেও দৃষ্টি রাখে। গত দুই সপ্তাহ মন থেকে প্রশ্নটি সরাতে পারিনি বলেই অনিচ্ছাকৃত তুলে ধরলাম। একদিন পর নারায়ণগঞ্জের সিটি নির্বাচন। বলেছি আইভী জিতবেন এবং খুব ভালোভাবে জিতবেন। কেন জিতবেন? কারণ আইভীর হারার কোনো পথ নেই।
মনে হয় প্রায় সাত বছর পর মহামান্য রাষ্ট্রপতির দাওয়াতে ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গভবনে গিয়েছিলাম। এর আগে গত মার্চে একবার গিয়েছিলাম। সেদিন স্ত্রীর অনুরোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলাম। কারণ সেই মাসে মেয়েটির বিলেতে পড়তে যাওয়ার কথা ছিল। একসময় আমার ছেলেমেয়েদের জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অসম্ভব আদরযত্ন করতেন। তার নিজের ছেলেমেয়েদের থেকে আলাদা করার তেমন উপায় ছিল না। কথায় আছে, নিজের থাকুক শতপুত তার পরও ভাইপুত। তিনি তেমনই করতেন। নাসরীনের থাইরয়েড অপারেশনের পর গত ছয়-সাত বছর খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। হয়তো আমার আগেই চলে যাবে। বিকালে সে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। প্রতিদিনই শরীর খারাপ থাকে, তাই খুব একটা বের হতে চায় না। প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট যে ঘেরাওয়ের মধ্যে বসেন সেই ঘেরাওয়ের মধ্যে আমার স্ত্রী গিয়ে বসেছিলেন। একসময় এসএসএফ তাকে সেখানে বসে থাকতে দেয়নি। অনেকের সঙ্গে আমি ঘেরাওয়ের বাইরে ছিলাম। ঠিক আমার আগেরজন যখন বেষ্টনীতে ঢোকেন তখন কয়েকজন জাঁদরেল এসএসএফ সামনে এমনভাবে দাঁড়ায় যেন কোনো অপরাধ করেছি। আর দেখার চেষ্টা না করে ফিরে এসেছিলাম। এবার তাই মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কারও সঙ্গে দেখা করতে চেষ্টা করিনি। বয়স হয়েছে, কদিনই বা বাঁচব। তাই চেয়ার ফেলে বঙ্গভবনের মাঠে বসেছিলাম। পরিচিত-অপরিচিত দু-একশ তো হবেই কুশল জানতে এসেছেন। সেখানে জেনারেল থেকে সিপাই, পিয়ন থেকে সেক্রেটারি, এমপি, মন্ত্রী কেউ বাদ যাননি। খুশিমনে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, বুকে বুক মিলিয়েছি। সেখানে জনাব গওহর রিজভী, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ইসমত কাদির গামা, আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বীরপ্রতীক, হাবিবুর রহমান বীরপ্রতীকসহ অনেকেই ছিলেন। ইসমত কাদির গামার একটি কথা আমায় স্পর্শ করেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর ১২-১৩ দিন না খেয়েছিলাম। কাদের ভাই আমাকে খাইয়ে বাঁচিয়েছেন। ’ জানি না আমি কাউকে বাঁচিয়েছি কিনা। সব সময় আমি আমার কর্তব্য করেছি। এখনো যা কর্তব্য মনে করি তাই করি। ঘি রঙের ইসমত কাদিরের গায়ে নতুন কোট বড় ভালো লাগছিল। বলেছিলাম, চমৎকার। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘নেবেন নাকি?’ না। রঙের মিল নেই। একেবারে কালো ছাড়া এ কোটের আমার কাছে কোনো মূল্য নেই। আপনার এটা পোশাক। আর কালো মুজিবকোট আমার প্রেরণা। যখন গায়ে থাকে তখন পিতার ছায়া থাকে। এটা আমার আদর্শের বর্ম।
হঠাৎই একসময় নজিব এসে হাত মেলায়। ছেলেটা লেখাপড়া জানে না। কিন্তু বুকের ভিতরটা বড় ঝকঝকে, তকতকে। একসময় কপর্দকহীন ছিল। এখন শুনি শত শত হাজার কোটি টাকার মালিক। কথাটা সত্যও হতে পারে, নাও হতে পারে। জিজ্ঞাসা করলাম কেমন আছিস। যেমন সব সময় বলে তেমন বলল, ‘ভালো আছি। দাওয়াত পাইনি, দাওয়াত ছাড়াই এসেছি। ’ শুনে কেমন যেন লাগল। বললাম, কী বলিস? দাওয়াত ছাড়া বঙ্গভবনে? কয়েক বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর ইফতার মাহফিলে দাওয়াত পেয়ে গণভবনে গিয়েছিলাম। ব্রাহ্মণের আবার পইতের প্রয়োজন কী মনে করে দাওয়াত কার্ড ভুলে ফেলে গিয়েছিলাম। যখন প্যান্ডেলে গিয়ে বসেছিলাম তখন এসএসএফের বন্ধুরা এসে কার্ড চায়। যদিও গেটে চায়নি। বলেছিলাম, ফেলে এসেছি। মনে করেছিলাম এটুকুই বোধহয় হবে। একটু পরে তার চেয়ে বড় কেউ এসে বললেন, স্যার কার্ডটা যে দরকার। কার্ডটা আনিয়ে নিলে ভালো হয়। এরপর আরেকজন এসে কার্ডের তাগাদা দেন। তখনো ইফতারের সময় ছিল। কার্ড ছাড়া যখন চলবে না তখন বেরিয়ে এসেছিলাম। পকেটে ফোন ছিল না। তাই গাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। পায়ে হেঁটে বাসায় ফিরলে বউ জিজ্ঞাসা করল, কী গো! গণভবনে ইফতার করলে না? বলেছিলাম, কার্ড ছাড়া ইফতার করা যাবে না। ওখানে মানুষ বা রোজাদার নয়, দাওয়াতপত্রের ইফতার। ‘কী বল! কারও বাড়িতে কেউ গেলে মানুষ তাকে সমাদর করে। এমনকি ফকির-মিসকিনও যদি কারও বাড়ি যায় তারা সম্ভ্রান্ত ভালো মানুষ হলে দুই হাত প্রসারিত বুকে আগলে নেয়। আর মাহে রমজানে ইফতারে সেখানে দাওয়াতপত্রের প্রয়োজন কী? কী বল? বিশ্বাস হয় না। ’ এ যে দেখছি সেই মহাকবি শেখ সাদির মতো ব্যাপার। মলিন বস্ত্রে রাজদরবারে তাকে জায়গা দেওয়া হয়নি। রাজপোশাকে গেলে তার কত সমাদর! খেতে বসে তিনি যখন রাজভোগ পকেটে পুরছিলেন তখন রাজকর্মচারীরা বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করেন, শেখ সাদি! আপনি অমন করছেন কেন? না খেয়ে পকেটে পুরছেন! তিনি বলেছিলেন, যার প্রাপ্য তাকেই দিচ্ছি। আমার ক্ষেত্রে অনেকটা তেমনই হয়েছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইফতার মাহফিলে। আগে হলে হয়তো দুঃখ হতো, এখন কিছুই মনে হয় না। কারণ আমি জেনেছি সব ক্ষমতা আল্লাহর। তিনি সব জানেন, সব দেখেন। যে দেশকে স্বাধীন করেছিলাম, সেই দেশে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দাওয়াতপত্র পেয়েও যেতে পারি না। প্রিয় নজিব দাওয়াতপত্র ছাড়াই গণভবন, বঙ্গভবনে অবাধে ঘুরে বেড়ায়। এটাও আল্লাহর এক মহিমা!
শেষাবধি মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১১৮তম অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। আমাদের আমন্ত্রণ করেছেন আগামীকাল। মহামান্য রাষ্ট্রপতির সময়োপযোগী পদক্ষেপ আমরা সাদরে গ্রহণ করেছি বলে তার ডাকে সাড়া দিয়ে বঙ্গভবনে যাব। দেশবাসীর নিশ্চয়ই জানা থাকার কথা, ২০১৫ সালে ঝড়-বৃষ্টি-তুফানে ‘আলোচনায় বসুন, দেশে শান্তি স্থাপন করুন’ এ রকম দাবি নিয়ে ৩০৮ দিন ঘরের বাইরে ছিলাম। গণতান্ত্রিক সমাজ, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে যত আন্দোলন-সংগ্রাম, যুদ্ধবিগ্রহ যা কিছুই হোক শেষ পরিণতি সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা ছাড়া বিকল্প নেই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি একেবারে মাটি থেকে উঠে আসা একজন পোড় খাওয়া রাজনীতিক। জীবনের বহু বছর আমরা একসঙ্গে চলেছি। জীবন শুরু করেছিলাম বঙ্গবন্ধুকে অবলম্বন করে, শেষ করতে চাই তাকে হৃদয়ে লালন করে। দেশে এখন পরমতসহিষ্ণুতার বড় অভাব। অন্যের প্রতি তেমন কোনো শ্রদ্ধা নেই। তার পরও যদি মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার সদিচ্ছার দ্বারা দেশে সামান্যতম স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে পারেন তাহলে সেটাই হবে তার জন্য তার জীবনের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক সার্থকতা। সংবিধানের ১১৮তম অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া এবং রাষ্ট্রপতি সময়ে সময়ে যেরূপ নির্দেশ করিবেন, সেইরূপ সংখ্যক অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন। ’ এখানে বলা হয়েছে, ওই বিষয়ে কোনো আইনের বিধানাবলি-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন। এখানে মহামান্য রাষ্ট্রপতি একেবারে স্বাধীন। তার এখন অবধি কারও কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নেই। তিনি একমাত্র সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ। না সংসদ, না মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের প্রতি। এ ক্ষেত্রে কোনো কিছু তাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না। যদি কোনো আইনের বিধিবিধান থাকত তাহলে তা মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে মান্য করতে হতো। কিন্তু যতক্ষণ নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কোনো বিধিবিধান তৈরি করা হয়নি ততক্ষণ মহামান্য রাষ্ট্রপতি একেবারে মুক্ত-স্বাধীন। তার কাছে দেশবাসী সেই স্বাধীনতাই কামনা বা প্রত্যাশা করে।সূত্র : বিডি প্রতিদিন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো
লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন
আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা
“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন
বাবা যখন ধর্ষক
যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন