লাইলাতুল বরাত : মুক্তির রজনী
মহা ফজিলতপূর্ণ ও বরকতময় রাত হচ্ছে ‘লাইলাতুল বরাত’। লাইলাতুল বরাতের অর্থ মুক্তির রজনী। একে ফারসি ভাষায় আমরা ‘শবে বরাত’ বলে থাকি। ‘শব’ অর্থ রাত। ‘বরাত’ অর্থ ভাগ্য। সেই হিসেবে ‘শবে বরাত’-এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ভাগ্য রজনী।কারো কারো মতে, পবিত্র কুরআনে এ রাতকে ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ্’ বা বরকতময় রজনী বলা হয়েছে। হাদিস শরিফে এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান’ তথা শাবানের মধ্যরজনী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাফসিরের কিতাব, হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ও ফিকাহের গ্রন্থসমূহে শবে বরাতের উল্লেখিত নাম ছাড়া আরও বিশেষ কিছু নাম এসেছে। যেমন: ‘লাইলাতুল কিসমাহ্’—ভাগ্যের রাত, ‘লাইলাতুত তাজবীয’—রিজিক বণ্টনের রাত, ‘লাইলাতুল ফায়সালাহ্’—তাকদীর নির্ধারণের রাত, ‘লাইলাতুল আফঊ—ক্ষমার রাত, ‘লাইলাতুল কারামি’—দয়ার রাত, লাইলাতুত তাওবাহ্’—তাওবার রাত ও ‘লাইলাতুন্ নাদামাহ্’—মিনতির রাত।
শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত হচ্ছে, এই মহিমান্বিত ও বরকতময় রাত। সে হিসেবে এ বছর ২২ মে দিবাগত রাতে শবে বরাত পালিত হবে আমাদের দেশে। শাবান মাস আল্লাহর কাছে অধিক মর্যাদাপূর্ণ মাস। এ মাসকে রমজানের প্রস্তুতি মাস বলা হয়েছে। নবী করীম (স.) অন্য মাসের তুলনায় এ মাসে বেশি নফল রোজা পালন করতেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, নবী করীম (সা.) বলেন, ‘শাবান মাস হলো আমার মাস আর রমজান হলো আল্লাহর মাস।’
শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে— আম্মাজান আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে না পেয়ে তার সন্ধানে বের হলাম। গিয়ে দেখলাম তিনি জান্নাতুল বাকিতে কবরবাসীদের পাশে দাঁড়িয়ে অঝোর ধারায় কাঁদছেন।নবীজি আমাকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘হে আয়েশা! তুমি কি মনে কর, আল্লাহ ও তার রাসূল তোমার ওপর জুলুম করবেন?’ আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! না, আমি এমনটি মনে করি না, তবে আমি ভেবেছিলাম, আপনি হয়তো অন্য কোনো স্ত্রীর ঘরে গিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে আয়েশা! আজকের রাত সম্পর্কে তুমি জেনে রেখো, মহান আল্লাহ এই রাতে দুনিয়ার প্রথম আকাশে অবতীর্ণ হন এবং কাল্ব গোত্রে যত ছাগল আছে, আর ওই ছাগপালের যত পশম আছে তার চেয়েও অধিক বান্দাকে তিনি এ রজনীতে ক্ষমা করে থাকেন।
‘কাল্ব’ হচ্ছে আরবের একটি প্রসিদ্ধ গোত্র, যারা অধিক পরিমাণে ছাগল পালন করত। ঐতিহাসিকদের মতে, ওই গোত্রে ২০ হাজারের বেশি ছাগল ছিল। যেহেতু তাদের ছাগপালের সংখ্যা ছিল বেশি, তাই নবীজি তাদের ছাগপালের পশমের কথা উল্লেখ করে বুঝিয়েছেন, শাবানের এই মধ্য রজনীতে আল্লাহ অফুরন্ত ক্ষমা ও রহমত নিয়ে দুনিয়াবাসীর উদ্দেশে নিচের আকাশে নেমে আসেন। যেসব বান্দা-বান্দি এ রাতে খাঁটি অন্তরে তাওবা করে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন। কোনো প্রার্থনাকারী এ রাতে বঞ্চিত হন না।
ইবনে মাজাহ্ শরীফের এক হাদিসে এ রাতের মর্যাদা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, হজরত আলী (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন শাবানের মধ্য রাতটি আসবে তখন তোমরা সে রাতে কিয়াম তথা নামাজ পড়বে, রাত জেগে ইবাদত করবে এবং পরদিন রোজা রাখবে। কেননা সে দিন সূর্যাস্তের সাথে সাথে আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে এসে বান্দাকে এই বলে ডাকতে থাকেন, আছ কি কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যাকে আমি ক্ষমা করব। আছ কি কেউ রিজিক প্রার্থনাকারী, যাকে আমি রিজিক দেব। আছ কি কেউ বিপদগ্রস্ত, যাকে আমি বিপদ থেকে উদ্ধার করব। এভাবে আল্লাহ ফজর পর্যন্ত বান্দাকে তার কুদরতী জবান দ্বারা আহ্বান করতে থাকেন।
আল্লাহ এ পুণ্যময় রজনীতে অসংখ্য বান্দা-বান্দিকে ক্ষমা করেন, তবে দুই শ্রেণির লোকের জন্য তার ক্ষমার দ্বার বন্ধ থাকে। (এক) ‘মুশরিক’—যে আল্লাহর সাথে শরিক করে; (দুই) যে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত রয়েছে অর্থাৎ যে তার অন্য মুসলমান ভাইয়ের সাথে বিবাদে লিপ্ত থেকে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে, তার সাথে শত্রুতা রাখে।
আল্লাহর কাছে পাঁচটি রাত খুবই মর্যাদার। এর মধ্যে শবে বরাতের রাতও রয়েছে। হাদিস শরীফে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই পাঁচ রাতের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। (এক) রজব মাসের প্রথম রাতের দোয়া; (দুই) শবে বরাতের দোয়া; (তিন) শবে কদরের দোয়া; (চার) ঈদুল ফিতরের রাতের দোয়া ও (পাঁচ) ঈদুল আজহার রাতের দোয়া।’
শবে বরাত আমরা কীভাবে পালন করব সে সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন বলেছেন, এ রাতের আমল হচ্ছে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত করা, দরুদ শরীফ পাঠ করা, আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকা, তাওবা-ইস্তেগফার করা, কান্নাকাটি করা, আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা, মাতা-পিতা ও আপনজনের কবর জিয়ারত করা, গরিব-মিসকিনকে দান-সদকা করা।
শবে বরাতে যেমন পালনীয় বিষয় রয়েছে তেমনি এ রাতে কিছু বর্জনীয় বিষয়ও রয়েছে। এ রাতে মসজিদে আলোকসজ্জা করা সমীচীন নয়। বাহ্যিক আলোর চেয়ে আল্লাহর কাছে অন্তরের আলোর মূল্যই বেশি। হতে পারে আল্লাহ এ রাতের ইবাদতের অসিলায় তার অনেক বান্দাকে ক্ষমা করে তার রহমতের কোলে তুলে নিতে পারেন। তাই অহেতুক কাজের পেছনে এ রাতে সময় ব্যয় করা হবে অর্থহীন। পটকা ফুটানো এবং আতশবাজি করাও এ রাতে ঠিক নয়। এতে ইবাদতে বিঘ্ন ঘটে। অন্যের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে কোনো ইবাদত করা হলে আল্লাহ তা কখনোই কবুল করবেন না। আমাদেরকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে, এ রাতে জাগ্রত থাকতে গিয়ে যেন ফজরের নামাজ কারো কাযা না হয়। কেননা, শবে বরাতের সারা রাতের আমল কখনো ফজরের ফরজ নামাজের সমতুল্য হবে না। সঠিক নিয়ম পালন করে এ রাতের আমল করলেই কেবল এ রাতের বরকত ও ফজিলত লাভ করা যাবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ঈদের ছুটির পর বুধবার থেকে নতুন অফিস সময়সূচি
পবিত্র ঈদুল আজহার পর সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিতবিস্তারিত পড়ুন
সৌদিতে হজে বিভিন্ন দেশের ৫৫০ হাজির মৃত্যু
সৌদি আরবে এ বছর হজ পালনে গিয়ে কমপক্ষে ৫৫০ জনবিস্তারিত পড়ুন
ঈদে ১ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ টি গবাদিপশু কোরবানি
এ বছর পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে মোট ১ কোটি ৪বিস্তারিত পড়ুন