শিশু নির্যাতন বিচার হীনতায় বাড়ছে , ধর্ষন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড
আগষ্ট মাস বাঙ্গালী জাতির জন্য একটি বেদনাদায়ক ও শোকের মাস । ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্ব-পরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশে রাজনৈতিক হত্যাকান্ড শুরু হয়। সেই নৃশংস হত্যাকান্ডে শিশু রাসেলও রেহায় পায়নি।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের চল্লিশ বছর পর সেই আগষ্ট মাসে প্রায় প্রতিদিন নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটতে থাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। গত মাসে সিলেটে প্রতিবন্ধী শিশু রাজনকে খুটির সাথে বেঁধে পিটিয়ে হত্যার শোক জাতি বিবেক থেকে মুছে না যেতেই ৩ আগষ্ট ২০১৫ তারিখে খুলনা নগরীতে শিশু শ্রমিক রাকিব (১২) কে পৈশাচিক কায়দায় পায়ুপথে কস্প্রেসার এর মাধ্যমে হাওয়া ঢুকিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। বর্তমানে একের পর এক বীভৎস কায়দায় শিশু হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। মানুষের অমানবিক, নিষ্ঠুর এই আচরনের পিছনে কাজ করছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে শুধু আইন শৃংখলা বাহিনীর দিকে তাকিয়ে না থেকে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
অনাদিকাল থেকে প্রচলিত “বাঙ্গালী জাতিগতভাবে শান্তিপ্রিয়” বিষয়টি এখন প্রশ্নের মুখোমুখি। শিশুরা হতাশা জনক অবস্থার মধ্যে অবিবেচনার শিকার হচ্ছে। শুধু আইন বা পুলিশ দিয়ে এ বিপর্যয় রোধ করা যাবে না। শৈশবে শিশুকাল ছিল না তা যেন শিশুদের বলতে না হয়। শিশু নির্যাতনের বিভৎসতায় তাই আজ অভিবাবক মহল সংঙ্কুচিত ও আতংকিত ।
একদিকে যেমন শিশু নির্যাতন, শিশু হত্যা বেড়েছে তেমনি শিশু ধর্ষনের ঘটনাও এ মাসে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ মাসে সারাদেশে ৩৫ জন শিশু ধর্ষনের শিকার হয়েছে, যেখানে এবছরের প্রথম ৫ মাসে শিশু ধর্ষনের শিকার হয় ৩৯ জন।
এ বছরের প্রথম ৫ মাসে গণ ধর্ষনের শিকার হয় ২৯ জন নারী সেখানে শুধু আগষ্ট ১৫ মাসেই গণ ধর্ষনের শিকার হয় ২৪ জন নারী ও শিশু। আগষ্ট মাসে ২৪ জন নারী ও শিশুকে ধর্ষনের চেষ্টা বা যৌন হয়রানী করা হয় যা এবছরের প্রথম তিন সাসের চেয়ে বেশী।
বছরের প্রথম তিন মাসে ১৯ জন নারী ও শিশুকে ধর্ষনের চেষ্টা বা যৌন হয়রানী করা হয়। শিশু নির্যাতন, শিশু হত্যা, শিশু ধর্ষন এর জন্য অপরাধীদের ফাঁসি দিলেই যে এ ধরনের হত্যাকান্ড ও নির্যাতন বন্ধ হয়ে যাবে তা নয়, এর জন্য জন সম্মূখে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিরাজ করায় এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর উপর আস্থাহীনতা থেকে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গনপিটুনিতে হত্যার প্রবনতা আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে । গত সাত মাসে যেখানে গড়ে ১১ জন গনপিটুতে নিহত হয়, সেখানে আগষ্ট মাসেই ৩১ জন মানুষকে গনপিটুনিতে প্রাণ দিতে হয়েছে ।
এ মাসে রাজনৈতিক সংহিসতায় ১১ জনের প্রানহানী ঘটে এবং ৩২৪ জন বিভিন্ন সংঘর্ষে আহত হয় । নিহত ও আহতদের অধিকাংশ ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক দল ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কর্মী ও সমর্থক। আবার নিহত ও আহতের ঘটনার অধিকাংশ ক্ষতাশীন রাজনৈতিক দলের অভ্যান্তরীন কোন্দল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজী, দখল ও পদ পদবীর কোন্দলে নিহত ও আহত হয়েছে । ক্ষমতাশীল দলের অভ্যান্তরীন কোন্দল থেকে রেহাই পায়নি মাগুরার গর্ভবতী মা ও পেটের শিশু সুমাইয়া।
প্রত্যেক মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার বাংলাদেশের সংবিধানে সংরক্ষিত । বিনা বিচারে মানুষ হত্যা অপরাধ এবং মানবাধিকার লংঘন । গন মানুষের মতামত অনুযায়ী বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রীতা ও আস্থাহীনতায় বিনা বিচারে মানুষ হত্যার প্রবনতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে । বিগত মাসে যেখানে গড়ে ৯ জন মানুষ ক্রস ফায়ারে নিহত হয়, সেখানে আগষ্ট’১৫ মাসে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হয় ২৯ জন কে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার ডকুমেন্টশন সেল দেশের বিভিন্ন দৈনিক প্রত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ৫২ ধরনের মানবাধিকার লংঘন ঘটনার তথ্য অনুযায়ী আগষ্ট’১৫ মাসে সর্বমোট ২৮৫২ জন নারী, পুরুষ, শিশু ক্ষতিগ্রস্থ ( আহত, নিহত এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে) হয়েছে।
উপরে উল্লেখিত ঘটনা ছাড়াও একমাসে অন্যান্য সড়ক ও রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৬০ জনের এবং আহত হয়েছে ২০৭ জন। গৃহকর্মী সহ অমানুষিক নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে ৪০ জন এবং আহত হয়েছে ৪৭ জন। একই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অজ্ঞাত ও রহস্যজনক কারণে মৃত ১৭ জন নারী ও ৬৯ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার হয়েছে।
এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে ৭ জন, যৌতুকের জন্য নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে ১ জন নারী ও আহত হয়েছে ৩ জন। ৭৭ জন নারী/পুরুষ অপহরন, গুম অথবা নিখোঁজ হয়েছে । পারিবারিক সহিংসতায় নিহত হয়েছে ২০ জন এবং আহত হয়েছে ১৩৯ জন, সামাজিক সহিংসতায় নিহত ১১ এবং আহত হয়েছে ৫১০ জন, দূর্বৃত্তের হাতে নিহত ৯৭ জন এবং আহত হয়েছে ২৩৭ জন নারী পুরুষ, বি.এস.এফ কর্তৃক নিহত ২ এবং আহত ৭ বাংলাদেশী এবং অপমৃত্যু হয়েছে ১৮২ জন।
উল্লেখ্য যে, আগষ্ট’১৫ মাসে খুলনার টুটপাড়ায় শিশু রাকিব (১২) কে পৈশাচিক কায়দায় পায়ুপথে কস্প্রেসার এর মাধ্যমে হাওয়া ঢুকিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। পারিবারিক সহিংসতার বলি হয়ে খালিশপুরে নিজ মাতা শারমিন কর্তৃক নৃসংশ ভাবে হত্যার শিকার হয়েছে ১১ মাসের কণ্যাশিশু সুমাইয়া। সোনাডাঙ্গা থানাধীন বয়রা পি.এম.জি অফিসের গেটের সামনে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের ছোড়া এসিডে দ্বগ্ধ হয়ে আপন ভাই-বোন শাওন ও কানিজ ফাতেমা সাত্তী। উক্ত ঘটনা সমুহ খুলনাবাসীকে আলোড়িত করেছে।
(তথ্য সুত্রঃ আগষ্ট ২০১৫ মাসে বাংলাদেশে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক পত্র-পত্রিকা এবং সংস্থার বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা শাখার মাধ্যমে সংগৃহিত তথ্য। এর বাইরেও মানবাধিকার লংঘন জনিত আরও ঘটনা থাকতে পারে, যা আমাদের সীমাবদ্ধতার কারনে সংগ্রহ করা সম্ভন হয়নি)
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো
লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন
আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা
“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন
বাবা যখন ধর্ষক
যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন