রবিবার, জুন ২, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

সন্তানের পড়ার খরচ জোগাতে দুপুরে খান না তিনি

মো. আক্কাস মিয়া। বয়স ৫২ বছর। বাড়ি ভৈরবের সদর উপজেলায়। প্রায় দেড় যুগ আগে জীবিকার তাড়নায় আসেন রাজধানী ঢাকায়।

এই শহরে আসার পর প্রথম ১০ বছর অবশ্য আক্কাস মিয়ার কেটেছে ফুটপাতেই। এখন স্ত্রী, দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে থাকেন রামপুরা এলাকার গাবতলীতে। জীবনের এই শেষবেলায় এসেও অভাব, অনটন আর দরিদ্রতার কাছে হার না মানা আক্কাস মিয়াকে চালাতে হচ্ছে পরিবারের পাঁচ সদস্যের ভরণপোষণ আর ছোট দুই ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ। যা জোগাতে প্রতিদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে চলেছেন তিনি। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাতে বিক্রি করেন নারকেলি, বাদামি, তাল মিছরি ও চাল কুমড়ার মোরব্বা।

রাজধানীর দোলনবাড়ির মোড়ে নারকেলি কেনার সময় কথা হয় এই জীবন সংগ্রামী আক্কাস মিয়ার সাথে। কথার একপর্যায়ে তিনি জানান, প্রায় ১৮ বছর ধরে এ ব্যবসার সাথে জড়িত। কখনো দোলনবাড়ির মোড়, মগবাজার মোড় আবার কখনো সাত রাস্তার মোড়ে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে তিনি তালমিছরি, নারিকেলি, বাদামি ও চালকুমড়ার মোরব্বা বিক্রি করেন।

দিনে কত টাকা রোজগার হয় জানতে চাইলে আক্কাস বলেন, প্রতিদিন সকাল ৭টায় বের হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত বিক্রি করি। সারা দিনে ১২ থেকে ১৩’শ টাকার বিক্রি হয়। এর মধ্যে খরচ বাদ দিয়ে দিনে তিন থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা লাভ থাকে। এই আয় দিয়েই চলছে দুই ছেলেমেয়ের লেখাপড়াসহ পাঁচজনের সংসারের খরচ। রামপুরার গাবতলীতে যে বাসায় ভাড়া থাকেন সেটিরই মাসিক ভাড়া এক হাজার টাকা।

আক্কাস মিয়া বলেন, ‘ঢাকায় এসে প্রথম ১০ বছর রাতে ফুটপাতে ঘুমিয়েছি, আর দিনে ব্যবসা করেছি। এখন প্রতিদিন যা আয় হয় তা দিয়ে কোনমতে স্ত্রী আর ছেলেমেয়ে নিয়ে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি।’

মোট পাঁচ সন্তানের জনক আক্কাস মিয়া। এর মধ্যে বড় মেয়ে দুটিকে বিয়ে দিয়েছেন। নিজে লেখাপড়া করতে পারেননি, তাই ইচ্ছে ছিল সন্তানদের লেখাপড়া শেখাবেন। কিন্তু সে ইচ্ছেপূরণ করতে পারেননি আক্কাস। অভাব অনটনের কারণে বড় দুই মেয়েকে অল্প বয়সেই বিয়ে দিতে হয়েছে। অন্যদিকে বড় ছেলেটা শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ্য হওয়ায় লেখাপড়া করতে পারেনি। তবে ছোট ছেলেটি এখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে আর সবার ছোট মেয়েটিকে কিছুদিন আগেই স্কুলে দিয়েছেন। আর এই দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে বেশির ভাগ দিনই দুপুরে না খেয়ে কাটাতে হয় তাঁকে।

অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া বড় দুই মেয়ে তাদের শ্বশুরবাড়িতে কেমন আছে জানতে চাইলে বেশ রেগে ওঠেন আক্কাস মিয়া। বলেন, ‘আমার জ্বালা-যন্ত্রণা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্যই আপনি এসব কথা তুলছেন, তাই না?’

একটুপর শান্ত হয়ে আসেন আক্কাস মিয়া। বলেন, ‘বড় দুই মেয়েই তো এখন আমার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড় মেয়েকে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দিয়ে বিয়ে দিছি আর মেজ মেয়েকে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে দেই। মেজ মেয়ের বিয়েতে ৬০ হাজার টাকা যৌতুক দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু দিতে পারিনি। এজন্য জামাই প্রায়ই মেজ মেয়েকে মারপিট করে আর বলে টাকা যত দিন না আনবি তত দিন মার খাবি। আমি খেয়ে না খেয়ে কিছু টাকা জমিয়েছি; বাড়ি গিয়ে দেব। কিন্তু টাকা দিয়েও তো ভরসা পাই না। বড় মেয়ের জন্য ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দেওয়ার পরও জামাই প্রায়ই মেয়েকে মারপিট করে আর বলে তোর বাপের কাছ থেকে আরো টাকা নিয়ে আয়। মেজ মেয়ের শাশুড়ি প্রায়ই মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমি গ্রামের বাড়িতে গেলে মেয়েদের দেখতে যাই। মেয়ের শাশুড়ি বলে আপনার মেয়ে কিছু বোঝে না; কোনো কাজ পারে না। আমি যদি বলি অল্প বয়সের মেয়ে; ওকে একটু বুঝায়ে নিয়েন আর কাজ দেখায়ে দিয়েন। উত্তরে মেয়ের শাশুড়ি বলে, আপনার অল্প বয়সের মেয়ে বিয়ে দিছেন কেন? বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান।’

এসব অত্যাচার সইতে না পেরে কয়েক মাস আগে মেজ মেয়েটি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল বলেও জানান আক্কাস মিয়া। বলেন, ‘১০ বছর ঢাকার ফুটপাতে ঘুমিয়ে টাকা গোছায়ে বড় মেয়ের বিয়ে দিছি। এখন বয়স হয়ে গেছে আর ফুটপাতে ঘুমাতে পারি না। যার কারণে ছোট মেয়ের ৬০ হাজার টাকা আর গোছাতে পারছি না।’

এসব কথা বলতে বলতে ঝরঝর করে কেঁদে ওঠেন আক্কাস মিয়া।

অল্প বয়সে মেয়েদের কেন বিয়ে দিয়েছেন জানতে চাইলে আক্কাস মিয়া বলেন, ‘তখন ভাবলাম ভালো ছেলে পাইছি, বিয়ে দেই। এখন বুঝতে পারছি অল্প বয়সে মেয়ে বিয়ে দিলে কী হয়। তাদের সংসার করার মতো বুদ্ধিই তো হয় না। যার কারণে স্বামী, শাশুড়ি এমনকি ননদের কাছেও মার খেতে হয়। আমি যদি একটু কষ্ট করে মেয়ে দুইটারে লেখাপড়া করায়ে বড় করে বিয়ে দিতাম তাহলে আমার মেয়েদের এ কষ্ট হতো না। এমনকি একটু বেশি লেখাপড়া করালে ওরা তো ছেলেদের চেয়ে কম নয়। কারণ মেয়েরাও তো দেখি অনেক বড় বড় জায়গায় চাকরি করে। বড় ছেলে প্রায়ই অসুস্থ থাকে। ওকে একটি জুতার দোকানে কাজ দিয়েছিলাম কিন্তু করতে পারে না।’

দেড় যুগ পার করে দেওয়ার পরও এই শহরে থিতু হতে চান না আক্কাস মিয়া। আক্ষেপ করে জানান, এত দিন ব্যবসা করেও কোনো টাকা জমাতে পারেননি। তবে তাঁর ইচ্ছে আছে কিছু টাকা জমিয়ে গ্রামে ফিরে যাবেন। সেখানে যেকোনো এক জায়গায় দোকান নিয়ে ছোটখাটো ব্যবসা করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শান্তিতে বাস করবেন।

আপাতত এই ইচ্ছে নিয়েই রাজধানীর বুকে এক একেকটি রাত পার করছেন আক্কাস মিয়া।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

হাতিয়ায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

নোয়াখালীর হাতিয়া উপকূলীয় এলাকা ঘূর্ণিঝড়ের রেমালের আঘাতে ও জলোচ্ছ্বাসে ধ্বংসস্তূপেবিস্তারিত পড়ুন

৫৭ বছর বয়সে এসএসসি পাস করলেন পুলিশ সদস্য

বগুড়ায় ৫৭ বছর বয়সে এসএসসি পাস করেছেন বগুড়া ট্রাফিক পুলিশেরবিস্তারিত পড়ুন

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তনবিস্তারিত পড়ুন

  • চলে গেলেন হায়দার আকবর খান রনো
  • গফরগাঁওয়ে শ্রেষ্ঠ শ্রেণি শিক্ষক শামছুন নাহার
  • ‘ও আল্লাহ আমার ইকবালরে কই নিয়ে গেলা’
  • ভিক্ষুকে সয়লাভ নোয়াখালীর শহর
  • কঠিন রোগে ভুগছেন হিনা খান, চাইলেন ভক্তদের সাহায্য
  • কান্না জড়িত কন্ঠে কুড়িগ্রামে পুলিশের ট্রেইনি কনস্টেবল
  • অজানা গল্পঃ গহীন অরণ্যে এক সংগ্রামী নারী
  • মৌলানা পাস দিয়েছিলেন তারেক মাসুদ
  • আজ শুভ জন্মদিন হুমায়ূন আহমেদ স্যার এর, আয়োজন জুড়ে যা যা থাকছে
  • অভিনেতা ডিপজল দেশে ফিরবেন বৃহস্পতিবার: কি অবস্থায় আছেন তিনি !
  • ড. ইউনূস ফ্রান্সে সম্মাননা নাগরিকত্ব পেলেন
  • সুপারস্টার মেসিকে দেখতে চাকরি বিসর্জন দিলেন এক মেসিভক্ত !