ফেসবুক বন্ধ : সরকারের কাছে কিছু প্রশ্ন?
মীর রুবেল : ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার জনগণের হাতে তুলে দিয়েছিল ইন্টারনেট, যার বদৌলতে গত দশ বছরের তুলনায় আমরা এগিয়ে গেছি অনেক দুর। তবে হঠাৎ এই এগিয়ে যাওয়াটা বোধ হয় কিছুটা বাধাগ্রস্থ হল গত সাত দিন ধরে। হ্যাঁ, আমি ফেইসবুকের কথাই বলছি। আমাদের অনেকের কাছেই হয়তো মনে হয় ফেইসবুক শুধুমাত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম।
কিন্তু আমরা কি জানি, এই ফেইসবুকই অনেক মানুষের রুটি-রুজির যোগারের মাধ্যম? হয়তো জানি না। আমি সেই সব মানুষের কথাই বলছি যারা এই ফেইসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে তাদের সংসারের খরচ মেটায়। শুধু তাই নয়, সরকারী অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি চিকিৎসা সেবা সবত্রই ফেইসবুকের ব্যবহার পরিলক্ষিত। অথচ আজ সাত দিন ধরে এই মাধ্যমটি বন্ধ থাকায় লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুক্ষীন হচ্ছে ফেইসবুক নির্ভর ব্যবসায়ীরা। হয়তো এভাবে আরও কিছুদিন চলতে থাকলে পথে বসতে হবে ফেইসবুক নির্ভর ব্যবসায়ীদের।
আমরা জানি, কেন বন্ধ করা হয়েছে ফেইসবুক। মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কিমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহীদের ফাঁসি কার্যকর করার পূর্বে এবং পরবর্তী সময়ে দেশে যেন কোন অস্থিরতা সৃষ্টি না হয়। অথচ ফেইসবুক বন্ধ ছিল কিনা, সরকার কি তা জানে? হয়তো সরকার এটা জানে না।
সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ফেইসবুক বন্ধ ঘোষণা দেওয়ার একদিন পর ( (১৯ নভেম্বর) সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক তার নিজের ফেইসবুক ভেরিফাইড পেইজে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন যেটা পত্র পত্রিকায় প্রচার হওয়ার পর তিনি তুলে নিয়েছিলেন। তাঁরও আগে গত বুধবার (১৮ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই), তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি ডিভিশন এবং আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ সচল থাকতে দেখা গেছে।
এসব কথা না হয় বাদই দিলাম। এছাড়াও দেশের ৭০ ভাগ ফেইসবুক ইউজার সরকারের এই ঘোষণাকে উপেক্ষা করে বিকল্প পদ্ধতিতে ফেইসবুক ব্যবহার করেছে্। এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, যারা বিকল্প পদ্ধতিতে ফেইসবুক ব্যবহার করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার। তাহলে তার কাছে আমার প্রশ্ন, মাননীয় প্রতিমন্ত্রী সরকার কতজন মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে?
আর যদি ব্যবস্থা নিতেই হয় তাহলে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এর বিরদ্ধে সর্বপ্রথম ব্যবস্থা নিন। ব্যবস্থা নিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই), তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি ডিভিশন এবং আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুকের বিরুদ্ধে।
সরকারের কাছে আমার একটি প্রশ্ন, ফেইসবুকসহ সকল সামাজিক যোগাযোগ বন্ধ করার উদ্দেশ্য কি শুধুই নাশকতা ঠেকানো, নাকি সাধারণ মানুষের সমালোচনার ঝড় ঠেকাতে এই ব্যবস্থা? হ্যাঁ, হয়তো তাই? যদি তাই না হতো, তাহলে আজ সাত দিন ধরে ফেইসবুক বন্ধ রয়েছে। অথচ দেশ কি আশংকা মুক্ত, নাশকতা কি থেমে আছে নেই? আজও (২৪ নভেম্বর) রাজধানীতে এক জাপানি নারীকে হত্যার পর গোপনে দাফন করার অভিযোগ উঠেছে।
সরকারের কর্মকান্ডে আমার মনে হয় তাকে ভূতে ধরেছে। যদি নাশকতাকারীরা নাশকতা করতেই চায় তাহলে তো অন্য মাধ্যমেও করতে পারে। আর সেটা হলো মোবাইল ফোন। তাহলে সরকার কেন মোবাইল ফোন বন্ধ করছে না? এটার উত্তর ও আমাদের জানা আছে। মেবাইল ফোন দিয়ে তো আর সরকারের বিরুদ্ধে কেউ স্ট্যাটাস লিখতে পারবে না কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কোন সমালোচনাও করতে পারবে না্। তাই হয়তো মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ করেনি সরকার। এসব প্রশ্ন এখন শুধু আমারই না, এ প্রশ্ন এখন সবার।
সরকারের কাছে তাই অনুরোধ রইলো, কথা বলা কিংবা মন্তব্য করার অধিকার সবারই রয়েছে। কারণ দেশটা একটি স্বাধীন দেশ। স্বাধীন ভাবে সবাইকে কথা বলার সুযোগ দিন, বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেবেন না।
[খোলা কলামে প্রকাশিত সকল লেখার দায়ভার সম্পূর্ণ লেখকের নিজের। খোলা কলাম লেখকের স্বাধীন মত প্রকাশের একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র। এই লেখার সাথে প্রতিষ্ঠানের মতামতের কোন মিল বা অনুপ্রেরনা নেই]
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো
লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন
আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা
“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন
বাবা যখন ধর্ষক
যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন