মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন মা-বাবা, আর পা হারানো ৫ বছরের শিশু সবুজের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন কি পূরণ হবে?
চার বছর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তারা মা-বাবা। সেই দুর্ঘটনায় ৫ বছর বয়সী সবুজ দাসেরও বাম পা আলাদা হয়ে যায়। তার ভাই সাজু দাশও মারাত্বক আহত হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বিভীষিকাময় দুর্ঘটনায় তছনছ হয়ে যাওয়া সংসারটি এখন একেবারেই ছন্নছড়া। সবুজ দাশের ঠাই হয়েছে তার বোনের বাড়ীতে। পা হারিয়ে ধুকে ধুকে জীবন চলছে তার। অপর ভাই সাজু দাশ তার গ্রামের বাড়ীতে জেঠার ঘরে বড় হচ্ছে।
পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে সবুজ সবার ছোট এবং মা বাবার সবচেয়ে আদরের। কিন্তু সেই আদর বেশী দিন তার কাপালে জোটেনি। ২০১৩ সালে ডিসেম্বরে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই সদরের দক্ষিন পার্শ্বে বাদামতলী এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তার বাবা ও মা। গুরুতর অবস্থায় সবুজ চন্দ্র জলদাস ও তার ভাই সাজু দাস কে নিয়ে যাওয়া হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তারা দুই ভাই প্রাণে বেঁচে গেলে ও চিরতরে পঙ্গু হয়ে যায় সবুজ চন্দ্র দাস। চাকায় পিস্ট তার বাম পা চিরদিনের জন্য হারায়।
মাত্র ৫ বছরে মা বাবা হারিয়ে সে হয়ে যায় নিঃস্ব। তার ঠাঁই হয় বড় বোন চন্দনা জলদাসের শ্বশুর বাড়ি জোরারাগঞ্জ ইউনিয়ের বিষুমিয়ারহাট বাজার সংলগ্ন জেলে পাড়ায়। তার স্বামী ক্ষুদিরাম জলদাস পেশায় জেলে। অতি কষ্টে কোনো রকম চলে তাদের সংসার। ২০১৬ সালে আদরের ছোট ভাইকে ভর্তি করানো হয় তাজপুর অলি আহমেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বর্তমানে সে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। স্ট্র্যাচারে ভর দিয়ে বহুদূর হেঁটে সে পাড়ি জমায় বিদ্যালয়ে। অন্য শিশুদের মতো সে ও স্বপ্ন দেখে পড়ালিখা করে একদিন শিক্ষক হবে। পড়ালিখার প্রতি তার ভীষণ আগ্রহ। কিন্তু তার বোনের পক্ষে ভরণ পোষন চালানো অতিকষ্ট সাধ্য। অভাবের সংসারে খাবার জোগাড় করা যেখানে কষ্টসাধ্য সেখানে সবুজের চিকিৎসা এবং পড়ালেখার খরচ জোগাড় করায় চিন্তায় দিশেহারা তার বোন চন্দনা।
চন্দনার স্বামী ক্ষুদিরাম জলদাস বলেন, ইতিমধ্যে সবুজের চিকিৎসা করাতে তার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে কয়েক দফা অপারেশনেরর কারনে তার হারানো বাম পায়ের গোঁড়ায় দেখা দিয়েছে ইনফেকশন। প্র¯্রাবে দেখা দিয়েছে নানবিধ সমস্যা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ শ্রীকান্ত জানিয়েছেন খুব দ্রুত সবুজ কে অপারেশন করতে হবে। সুস্থ্য হলে বাম পায়ে কৃত্রিম পা সংযোজন করতে হবে। এ সবের জন্য প্রয়োজন দুই লক্ষাধিক টাকা। এত টাকা জোগাড় করা ক্ষুদিরামের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। দিন যত যাচ্ছে সবুজের শারিরীক অবস্থা তত অবনতি হচ্ছে।
সবুজ জানায়, স্ট্র্যাচারে ভর করে সিড়ি বেয়ে ২য় তলার স্কুল ভবনে আসতে তার খুব কষ্ট হয়। পড়ালেখায় শিক্ষকরা তাকে সহযোগীতা করেন। বড় হয়ে তার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন। সে জানায়, বাবা মাকে হারিয়ে বোনের বাসায় থেকে সে বড় হচ্ছে। তার কৃত্রিম পা হলে স্কুলে আসতে সুবিধা হবে জানায় সে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকসানা ইয়াসমীন বলেন, সবুজ অত্যন্ত ভালো ছেলে।পড়ালেখায় অনেক আগ্রহী। সমাজের সহযোগিতা পেলে সে আরো ভালো কিছু করতে পারবে। বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হৃদয় রঞ্জন দে বলেন, সবুজের পাশে আমাদের সকলের এগিয়ে আসতে হবে। তার একটি পা লাগানো প্রয়োজন।
সবুজের বোন চন্দনা সমাজের বিত্তশালীদের সহযোগীতা চেয়ে বলেন, সড়ক দূর্ঘটনায় আমাদের পরিবার তচনছ হয়ে গেছে। এক ভাই বড় হচ্ছে আমার জেঠার কাছে। সবুজকে নিয়ে আমি সংগ্রাম করছি। তার চিকিৎসা না করাতে না পারলে ভবিষ্যত আরো অন্ধকার হয়ে যাবে। তাদের সহযোগীতা করতে চাইলে ০১৮২৫১৯২৮৪২ এই নাম্বারে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেন চন্দনা।
মিরসরাই উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, সবুজ প্রতিবন্ধী তালিকাভূক্ত হলে তাকে শিক্ষা বৃত্তির আওতায় আনা যাবে। এছাড়া তিনি সরকারী বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রেও সহযোগীতার আশ্বাস দেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নবনির্মিত এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা সেনানিবাসে নবনির্মিত আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অববিস্তারিত পড়ুন
আজ আইওএম মহাপরিচালক ঢাকায় আসছেন
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক অ্যামি পোপ আজ রোববারবিস্তারিত পড়ুন
প্রধানমন্ত্রী ১০ টাকার টিকিটে চোখ পরীক্ষা করালেন
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালেবিস্তারিত পড়ুন