শনিবার, মে ৪, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

কিশোরীকে ধর্ষণপূর্বক হত্যা ও বিচারের গল্প

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া দরিদ্র পরিবারে কন্যা রুনা ভালবেসেছিল আরেক প্রতিবেশী কিশোর সেন্টুকে। চঞ্চলা রুনা সেদিন সন্ধ্যার দিকে প্রতিবেশী নুরার বাড়িতে টিভি দেখতে গিয়েছিল। প্রেমের ফাঁদ পেতে প্রেমিক সেন্টু ও তার বন্ধু কামু রুনাকে ডেকে নিয়ে যায় পার্শ্ববতী তামাক ক্ষেতে। সেখানে নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে প্রেমিক সেন্টু তাকে ধর্ষণ করে এরপর উপর্যুপরি ধর্ষণ করে কামু, আজানুর, শুকুর ও মামুন। ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয় না ওই ভন্ড প্রেমিক ও তার বন্ধুরা। এরপর চাকু দ্বারা ক্ষত-বিক্ষত করে রুনাকে হত্যা করে। ঘটনার পরপরই এই পাঁচ বন্ধুকে তাদের স্ব-স্ব বাড়িতে অনুপস্থিত থাকতে দেখা যায় এবং তারা এলাকার বাইরে চলে যায়। সেই সন্দেহ থেকেই পুলিশ অবশেষে থলের বিড়াল বের করতে সমর্থ্য হয়।

ঘটনাটি ২৫ মার্চ ২০০৪, ওই ঘটনায় মামুন ও আজানুর কুষ্টিয়া থেকে প্রথমে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ওরা অপর তিনজনকে জড়িত করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তাদের দুজনের স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, ওরা ভিকটিমকে তার ওড়না দিয়ে বেঁধে দুই হাত চেপে ধরে পর্যায়ক্রমে কামু, সেন্টু, আজানুর ও মামুন নির্দায়ভাবে ধর্ষণ করে। সেন্টু ও আজানুর ধর্ষণ করার সময় ভিকটিম অজ্ঞান হয়ে পড়ে। ধর্ষণ শেষ হওয়ার পর আসামি শুকুর তার কোমর থেকে চাকু বের করে ধর্ষণের কথা যাতে জানাজানি না হয় সে কারণে উপর্যুপরি রুনা খাতুনের গোপনাঙ্গ ও স্তনসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে। আঘাতের একপর্যায়ে রুনা মৃত্যুবরণ করে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে লাশের ময়না তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও মৃত রুনাকে উপর্যুপরি ধর্ষণ শেষে চাকু দ্বারা রক্তাক্ত জখম করে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এ মামলার ঘটনায় কোনো প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ছিল না। আসামিদের ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য সত্য ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত অভিহিত করে ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা বিচার-বিশ্লেষণে এবং মৃত রুনা খাতুনের প্রতি চরম নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতা প্রদর্শণের কারণে কুষ্টিয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক আকবর আলী মৃধা ২০১০ সালে পাঁচজনকে ফাঁসিতে মৃত্যুদ-ের আদেশ দেন। এ রায় দেওয়ার ব্যাপারে বিচারক প্রচুর বিচার-বিশ্লেষণ ও বিভিন্ন দিক চিন্তাভাবনা করেন এবং উচ্চ আদালতের বিভিন্ন নজির উল্লেখ করেন।

মানব জাতির শুরু থেকেই ধর্ষণ সমস্যার জন্ম এবং পৃথিবীর সব দেশেই কম বেশী এ সমস্যা বিদ্যমান। তবে যুগে যুগে এর ধরণ ও রুপ পাল্টিয়েছে এবং ব্যাপকতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সেকারণ এ সমস্যাগুলো দমন করে সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছে। এ পর্যায়ে আলোচনার বিষয় কোনো নারী কোন পুরুষ কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হলে এ আইনের অধীন কি ধরণের প্রতিকার পেতে পারে এবং বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা তা কিভাবে গ্রহণ করে।

বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৩৭৫ নং ধারা অনুযায়ী-কোনো নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে অথবা কোনো নারীর সম্মতি ছাড়া অথবা কোনো নারীকে মৃত্যু বা শারীরিক আঘাতের ভয় দেখিয়ে সম্মতি দিতে বাধ্য করলে অথবা নাবালিকা অর্থাৎ ১৬ বছরের কম বয়স্ক শিশু সম্মতি দিলে কিংবা না দিলে (সে যদি নিজ স্ত্রীও হয়) অথবা কোনো নারীকে বিয়ে না করেই ব্যক্তিটি তার আইনসঙ্গত স্বামী এই বিশ্বাস দিয়ে যদি কোনো পুরুষ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে তাকে আইনের ভাষায় ধর্ষণ বলা হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, অনুপ্রবেশই নারী ধর্ষণের অপরাধ রূপে গণ্য হবার জন্য যথেষ্ট বিবেচিত হবে।

এদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩)- এর ৯ ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের অপরাধের যে সকল শাস্তির বিধান রয়েছে তা হলোঃ

ধর্ষণের ফলে কোনো নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে ধর্ষণকারীর জন্য রয়েছে মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং ইহার অতিরিক্ত অন্যুন এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ডের বিধান। একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করলে ধর্ষণকালে বা ধর্ষণের পর যদি তার মৃত্যু ঘটে তবে উক্ত দলের সকলের জন্যই এই শাস্তি প্রযোজ্য হবে।

ধর্ষণের চেষ্টা করলে ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ দশ বছর এবং সর্বনিম্ন পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং এর অতিরিক্ত অর্থদন্ডেরও বিধান রয়েছে।

কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানো বা আহত করার চেষ্টা করলে ধর্ষণকারী যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবেন।

পুলিশ হেফাজতে কোনো নারী বা শিশু ধর্ষিত হলে যাদের হেফাজতে থাকাকালে এ ধর্ষণ সংগঠিত হয়েছে তারা সকলেই নারী ও শিশুর হেফাজতের ব্যর্থতার জন্য সর্বোচ্চ দশ বছর ও সর্বনিম্ন পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত কমপক্ষে দশ হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।

ধর্ষণকারী এক বা একাধিক ব্যক্তি হতে পারে আবার ধর্ষণ না করেও কোনো ব্যক্তি ধর্ষণের ঘটনায় সাহায্য করতে পারে। সবক্ষেত্রে প্রত্যেকেই সমানভাবে দায়ী হবে এবং শাস্তি লাভ করবে। বিচারক শাস্তির পরিমাণ ঠিক করেন অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে। মামলার বিষয়বস্তু (ধর্ষণের শিকার নারীর জবানবন্দি, ডাক্তারী পরীক্ষার ফলাফল এবং অন্যান্য সাক্ষ্য) পর্যালোচনা করে নিজস্ব বিচার-বিবেচনার ভিত্তিতে বিচারক রায় দেন এবং অপরাধীর শাস্তি নির্ধারণ করেন।

ধর্ষণের পর ধর্ষিত নারীর যা করণীয়

প্রমাণ বা সাক্ষ্য সংরক্ষণ করতে হবে। ধর্ষণের ঘটনাটি দ্রুত কাছের কাউকে জানান। কারণ তিনি আপনাকে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবেন এবং মামলার সময় সাক্ষ্য দিবেন।

ধর্ষণ প্রমাণের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ষণের শিকার নারীর শরীর। এর জন্য ধর্ষণের ঘটনার পর যে অবস্থায় আছেন তেমনি থাকুন, নিজেকে পরিষ্কার বা গোসল করবেন না। কারণ ধর্ষণকারী অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীর শরীরে কিছু প্রমাণ চিহ্ন রেখে যায়। ডাক্তারী পরীক্ষার দ্বারা নারীর শরীর থেকে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য-প্রমাণাদি এবং আলামত সংগ্রহ করা যায়, যা ধর্ষণ প্রমাণ ও ধর্ষণকারীকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।

ঘটনার সময় যে কাপড় গায়ে ছিলো অবশ্যই সংরক্ষণ করবেন। কাগজের ব্যাগে করে এই কাপড় রেখে দিন। কাপড়ে রক্ত, বীর্য ইত্যাদি লেগে থাকলে তা যদি ধর্ষণকারীর রক্ত বা বীর্যের সাথে মিলে যায়, তাহলে মামলায় এটা গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসাবে কাজ করে।

দ্রুত থানায় অভিযোগ দায়ের করতে হবে

ধর্ষণের ঘটনা ঘটার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার নিকটবর্তী থানায় এজাহার বা অভিযোগ দায়ের করুন। যদি সম্ভব হয় তবে একজন আইনজীবীকে সাথে নিতে পারেন।

পুলিশ কর্মকর্তার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে চেষ্টা করুন। ঘটনার সময়ের আপনার পরিধেয় কাপড় ও অন্যান্য সাক্ষ্য সাথে রাখুন। কারণ এসবই পুলিশ অফিসারের তদন্তের সময় কাজে লাগবে। আপনি চাইলে ঘটনা সম্পর্কে মহিলা পুলিশ কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করেত পারেন।

থানায় অভিযোগ দায়েরের পর যদি পুলিশ কোনো ব্যবস্থা গ্রহন না করেন তবে অতিদ্রুত পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ( এস.পি অথবা ডি.সি) কে লিখিতভাবে অবহিত করুন। ঘটনার দিনের মধ্যে যদি তারাও কোন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন না করে তাহলে পরের দিন অবশ্যই প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে কিংবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা দায়ের করুন। এ ব্যাপারে শুধুমাত্র ক্ষতিগ্রস্থ নারী নয়, তার পক্ষ থেকে যে কেউই (যিনি অপরাধ সম্পর্কে জানেন) এ অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।

মনে রাখবেন, আপনি যত তাড়াতাড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন, তত তাড়াতাড়ি পুলিশ কর্মকর্তা আপনাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন। কারণ ধর্ষণের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ডাক্তারী পরীক্ষা না করালে ধর্ষণের প্রমান পাওয়া যায় না। ডাক্তারী পরীক্ষা সরকারী হাসপাতালে বা সরকার কর্তৃক এই ধরনের পরীক্ষার উদ্দেশ্যে স্বীকৃত কোন বেসরকারী হাসপাতালে সম্পন্ন করা যাবে। ডাক্তারী পরীক্ষা হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার অতিদ্রুত সম্পন্ন করবেন এবং ডাক্তারী পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি সার্টিফিকেট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রদান করবেন। ডাক্তারী রিপোর্ট দ্রুত হাতে পেলে পুলিশ দ্রুত ঘটনার তদন্ত শুরু করতে পারবেন।

চিকিৎসককে সব কথা খুলে বলতে হবে

দ্বিধা না করে চিকিৎসক যা যা জানতে চাইবেন তার সঠিক জবাব দিন। কারণ আপনার কথার ওপর নির্ভর করে তিনি আপনাকে সাহায্য ও সেবা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আপনার মানসিক অবস্থার কথাও তাকে জানান। আপনার পরবর্তী মাসিক যদি সময় মত না হয় তবে সাথে সাথেই চিকিৎসকের সাথে দেখা করতে ভুলবেন না। লেখক: এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

২৪ ঘণ্টা না যেতেই ফের কমলো স্বর্ণের দাম

একদিন না যেতেই আবারও স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে জুয়েলারিবিস্তারিত পড়ুন

গরমে চুলের যত্ন নেবেন কীভাবে?

গরমে, ঘামে চুল তেলতেলে হয়ে যায়। তাই মাথার ত্বক পরিষ্কারবিস্তারিত পড়ুন

একলাফে সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৩১৩৮ টাকা

দেশের বাজারে এক লাফে ৩১৩৮ টাকা কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনবিস্তারিত পড়ুন

  • ত্বকের দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়
  • দেশের বাজারে কমলো স্বর্ণের দাম
  • কঠিন রোগে ভুগছেন হিনা খান, চাইলেন ভক্তদের সাহায্য
  • মিস ওয়ার্ল্ড-২০২৪ জিতলেন ক্রিস্টিনা পিসকোভা
  • দুই নারী আম্পায়ারকে নিয়োগ দিচ্ছে বিসিবি
  • তিশা থেকে জয়া আহসান, কপালে বাঁকা টিপের সেলফির রহস্য কী?
  • পরোক্ষ ধূমপান থে‌কে নারী‌দের সুরক্ষা চায় ‘নারী মৈত্রী’
  • মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার ফাইনালে বাংলাদেশের নীলা
  • মন্ত্রণালয়ের নামে ‘মহিলা’ বদলে দেয়া হচ্ছে ‘নারী’
  • তরুণীরা আবেদনময়ী সেলফি তোলেন কেন?
  • যেভাবে প্রতিবন্ধকতা জয় করছেন কানিজ ফাতেমা
  • ‘বুড়ার কাছ থেকে না নিলে মারা যাব’