বৃহস্পতিবার, মে ৯, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

দুধ কলায় বিষধর সাপ পুষেছে সরকার, রাস্তায় গাল দেয় ইমরান সরকার!

জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশন চলাকালে আওয়ামী লীগ দলীয় মহিলা এমপিদের একাংশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন ইমরান এইচ সরকারকে শায়েস্তা বা প্রতিরোধ করার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকে প্রশ্রয় দেননি, নিভৃত করেছেন। তবে দুঃখ ও আফসোসের সঙ্গে বলেছেন, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজত তাণ্ডবের সময় কোথায় ছিল ইমরান?

তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে ইমরান আজকে নেতা। সে এখন বড় বড় কথা বলে। এর আগে ছাত্রলীগ নেতারা ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে ‘কুত্তার মতো’ পেটানোর হবে।

তারা আরো ঘোষণা দেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যেখানে ইমরান এইচ সরকার ও সনাতনকে (সংস্কৃতিকর্মী) যেখানেই দেখা হবে, সেখানে কুত্তার মতো পেটানো হবে।

যদিও আইন হাতে তুলে নেয়ার এখতিয়ার কারো নেই এবং সমর্থনযোগ্য নয়। সেকারণে বিক্ষুদ্ধ ছাত্রলীগ নেতাদের আবেগমথিত এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের মহিলা এমপিদের প্রশ্রয় না দিয়ে উল্টো নিভৃত করে অভিভাবকত্বের পরিচয় দিয়েছেন।

ইমরান এইচ সরকারকে কেউ জানতো না, কেউ চিনতোও না। কিন্তু এ ক’বছরে ইমরান এইচ সরকার আজ শাসকদলকেই ঝাঁকুনি দিচ্ছেন না; একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও দণ্ডিতদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনই গড়ে তোলেননি; দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন। একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধে গঠিত ট্রাইবুন্যাল যখন জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবতজীবন দণ্ডে দণ্ডিত করেছিল তখন প্রতিবাদী তারুণ্য শাহবাগে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিল। সরকারের সঙ্গে জামায়াতের গোপন আঁতাতের ফসল যাবতজীবন কারাদণ্ড, এই আশংকায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী তারুণ্যের সঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চের ব্যানারে রীতিমতো বিপ্লব ঘটেছিল। নারী, পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিবাদের গণজোয়ার তৈরি করেছিলেন জনতা। সকল প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন সেই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিলেও সেদিন মঞ্চে তাদের নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন এককালের চীনাপন্থিরা। এমনকি গণদাবির মুখে আইন সংশোধন করে উচ্চ আদালতে আপিলের ব্যবস্থা করে কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ ও তা কার্যকর করা হয়।

ইমরান এইচ সরকারসেইদিন গণজাগরণ মঞ্চের ইমরান এইচ সরকারকে আওয়ামী লীগ সরকার আশ্রয়, প্রশ্রয়, প্রক্টেশনই দেয়নি, তার নির্দেশে শিক্ষাঙ্গনে জাতীয় পতাকা উঠেছিল। সেদিনও বলেছিলাম, শাহবাগের বিপ্লবকে অভিনন্দন জানাই। তারুণ্যের প্রতিবাদকে অভিনন্দিত করি; কিন্তু শাহবাগের এই গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে না। গণজাগরণ মঞ্চের ইমরান সরকারের ডাকে সারাদেশের মানুষের পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রীরা পর্যন্ত সচিবালয় থেকে বেরিয়ে এসে সংহতি ও সমর্থন জানিয়েছিলেন। জনগণ সরকার কিংবা আদালতের প্রতি যেকোনো দাবি জানাতেই পারে। কিন্তু মন্ত্রীরা, আমলারা যখন রাস্তায় নেমে ইমরান সরকারের ডাকে সংহতি জানান; তখন আমরা বলেছি আদালতের ওপর এর প্রভাব পরে। এটা যুক্তিসংঘত নয়। সেদিন গণজাগরণ মঞ্চের অতি বিপ্লবীরা স্বাধীনতা সংগ্রামী ও মুজিব বাহিনীর অন্যতম ৪ প্রধানের একজন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুন্থানের নায়ক তোফায়েল আহমেদের প্রতিও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছিলেন। ছাত্রলীগ সেদিন থেকেই প্রতিবাদ করতে গিয়ে দূরত্ব তৈরি করেছিল।

পরবর্তীতে দিনে দিনে মতলববাজী যত দৃশ্যমান হতে থাকলো, ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বাধীন গণজাগরণ মঞ্চে ভাঙনই দেয়া দেয়নি; রীতিমতো দুর্বল হয়ে পড়ে। বুড়িগঙ্গার জল অনেক দূষিত হয়েছে। সময়ের চাকা নদীর স্রোতের মতো বয়ে গেছে। রংপুর মেডিকেল থেকে পাস করে আসা ইমরান এইচ সরকার পেশাগত জীবনে সাফল্য হাতের মুঠোয় পুরতে পারুন আর নাই পারুন; দেশবাসীর সামনে একনামে পরিচিত হয়ে গেছেন। তার আয় রোজগারের ব্যবস্থা কি? তা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তার সুরাহা হোক বা না হোক, ইমরান এইচ সরকার, সরকারি বাসভবনে জামাই আদরে উঠে যাবার সুযোগ পেয়েছেন। এককালের কমিউনিস্ট রাজনীতিতে জনসমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয়ে গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে হিজরত করে এসে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এমপিই নন, শিক্ষামন্ত্রীই নন; প্রেসিডিয়ামেই ঠাঁই পেয়েছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।

একে একে যুদ্ধাপরাধীদের গলায় ফাঁসির রশি ঝুলেছে। অন্যদিকে শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ কন্যা ভালোবাসার টানে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের নেতা ইমরান এইচ সরকারের গলায় বরমাল্য দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী নাহিদের রক্তচাপ মাপার মতো ডাক্তারি পরীক্ষার ছবিখানি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হয়েছে বিয়ের আনন্দঘন দম্পত্তির ছবিগুলোও। শিক্ষামন্ত্রী শ্বশুরের মিন্টোরোডের সরকারি বাড়িতে থেকে খেয়ে হেফাজতে ইসলামসহ আলেম ওলামাদের দাবির প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের মানচিত্র ঢেকে দিয়ে বসানো বহুল বির্তকিত মৃণাল হকের গ্রীক দেবী থেমিসের বিকৃত ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে ইমরান এইচ সরকার তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হয়ে সুপ্রিম কোর্ট এলাকা পর্যন্ত মশাল হাতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। সেই মিছিল থেকে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগান উঠেছে, ‘ ছি ছি হাসিনা, লজ্জায় বাঁচি না’।

এমন সব অসভ্য স্লোগানে নগরবাসী আলোড়িত না হলেও একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত মওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, আব্দুল কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আত্না শান্তি পেয়েছে কিনা জানিনা, তবে মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী ও সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতারা তৃপ্তির হাসি হেসেছেন।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নিজের ক্যারিশমায় গণসমর্থন নিয়ে ওয়ান ইলেভের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ব্যালট বিপ্লবে অভিষিক্ত হয়ে ক্ষমতায় না আসলে একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধীদের ফাঁসিতে ঝুলা দূরে থাক; আদালতের কাঠগড়ায়ও দাঁড়াতে হতো না। শেখ হাসিনা সরকারকে না থাকলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ইমরান এইচ সরকার বা গণজাগরণ মঞ্চের জন্মও হতো না। বিএনপি জামায়াত শাসনামলে যখন গ্রেনেড, বোমায়, জঙ্গিবাদের আক্রমণে গোটা বাংলাদেশ রক্তাক্ত যখন ইমরান এইচ সরকার বা তার গণজাগরণ মঞ্চের আবির্ভাব ঘটেনি। প্রতিবাদ, প্রতিরোধের মশাল প্রজ্জলিত হতে দেখা যায়নি। সরকারের সমর্থনে, সরকারি দলের খেয়ে পরে গণজাগরণ মঞ্চ ও ইমরান এই সরকারের আর্বিভাব এবং টিকে থাকা জড়িয়ে আছে।

একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক বন্ধুবরেষু মোজাম্মেল বাবুর আমন্ত্রণে দু’বছর আগে থার্টি ফার্স্ট নাইটে আড্ডায় যোগ দিয়েছিলাম। অকাল প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল সেই আড্ডায় ছিলেন। আমার টেবিলে একাত্তরের মানবতা বিরোধী ট্রাইবুন্যালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ ও ইমরান এইচ সরকার যখন এসে বসলেন তখন মাহবুবুল হক শাকিল এসে ইমরানকে বলেছিলেন, ‘ গণজাগরণ মঞ্চের প্রথম ব্যানার থেকে আন্দোলনের টাকাটা আমি দিয়েছিলাম, আজ তুই কোথা থেকে কার টাকায় রিষ্ট-পু্ষ্ট হচ্ছিস; সব খবর রাখি।’ আমার টেবিলে বসা ইমরান এইচ সরকারকে চরমভাবে অপমান-অপদস্ত করায় আমার খারাপ লাগছিলো। একজন মানুষকে এভাবে অপদস্ত করা মানে আমাদেরকে অসম্মানিত করা, এই বিবেচনাবোধ থেকে অনুজপ্রতীম, স্নেহভাজন শাকিলের আচরণের প্রতিবাদ করেছিলেন। সে রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনার সাক্ষী অনেক সংবাদ কর্মীই রয়েছেন। পরদিন ভোরে টেলিফোন করে শাকিল আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করে আবেগ আপ্লুত হয়েছিলেন। তারপর শাকিলের সঙ্গে অনেক দেখা সাক্ষাত, আড্ডা হয়েছে। আজকে শাকিল বেঁচে থাকলে কি প্রতিক্রিয়া হতো, তা জানি না। তবে এটা বুঝতে পারছি, ইমরান এইচ সরকারকে বা তার গতিপ্রকৃতিকে শাকিল আয়ত্ব করেছিলেন। করেছিলেন বলেই, এতটা বিক্ষুদ্ধ ও চড়াও হয়েছিলেন।

আজকে শাসকদল আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়ায় এবং ইমরান এইচ সরকারের তৎপরতায় এটাই দৃশ্যমান হচ্ছে যে, সরকার সেদিন দুধ কলা দিয়ে একটি বিষধর সাপ পুষে ছিল। যে সাপের দংশনের বিষ এখন সরকারকেই হজম করতে হচ্ছে। সরকারের ভেতরে বাস করা জনবিচ্ছিন্ন একটি ক্ষুদ্র অংশ রয়েছে যাদের অতীত অতি বিপ্লবের, ব্যর্থতা আর কলংকের বোঝা বহন করা। তারা শেখ হাসিনার সরকার দিয়ে তাদের রাজনীতিটা বা মিশনটা পূরণ করে নিতে চান। আর শেখ হাসিনা ও তার সরকার গণতান্ত্রিক রাজনীতির নানা পথে দাবা খেলায় জিততে চান। এখানে ওই শক্তিটি সরকারকে উগ্র, হটকারী পথে টানতে চায়। সেখানে সাপের খেলায় ইমরান এইচ সরকার তাদের হয়ে কাজ করছেন কিনা, সেটিও প্রশ্নের মুখে।

পীর হাবিবুর রহমান।।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
উৎসঃ পূর্বপশ্চিম

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?