শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

শিশু যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ: আপনার শিশুকে যে জিনিসগুলো অবশ্যই শেখাতে হবে

আমরা আমাদের বাচ্চাদেরকে নিজেদেরকে যৌন নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা করার উপায় সম্পর্কিত দক্ষতাগুলো না শিখিয়েই বাইরের দুনিয়ায় পাঠাই। শিশু যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত যে ভয়ানক চিত্র ও পরিসংখ্যান দেখা যায় তা থেকে জানা গেছে, ১৮তম জন্মদিনের আগেই প্রতি তিনটি মেয়ের একটি মেয়ে এবং প্রতি ৬টি ছেলের একটি ছেলে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। আর এদের শীর্ষে থাকা ৮৫ শতাংশই তাদের নিপীড়ককে আগে থেকেই চেনে বা জানে।

যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধের শিক্ষা খুবই সহজ-সরল। তবে একবার কোনো শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হলে বিষয়টি বেশ জটিল আকার ধারন করে। যা হয় ধ্বংসাত্মক এবং জীবন বদলে দেওয়ার মতো ঘটনা।

শিশুদেরকে খুবই অল্প বয়স থেকে যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধের পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। শিশুরা ছবিযুক্ত বই পছন্দ করে। সুতরাং দেহের নিরাপত্তা, দৈহিক স্বায়ত্বশাসন এবং লিঙ্গ সমতা বিষয়ে ছবিযুক্ত বইয়ের মাধ্যমে তাদেরকে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে।

শিশুদেরকে প্রশিক্ষিত করার পাশাপাশি তাদের বাবা-মাকেও দৈহিক নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলোতে প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। বাবা-মাকে শিশুদের মানসিক বিকাশের কৌশলগুলো সম্পর্কে শিক্ষিত হতে হবে। আর শিশুটি যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে কিনা সে লক্ষণগুলো বুঝার মতো প্রশিক্ষিত হতে হবে। আর কোনো শিশু যৌন নিপীড়িত হওয়ার কথা বলেলে তা বিশ্বাস করার মতো মানসিকতা থাকতে হবে। যে শিশুরা যৌন নিপীড়িত হওয়ার কথা বলে তাদের ৯৮ শতাংশই সত্য কথা বলে।
দৈহিক নিরাপত্তার প্রধান পয়েন্টগুলো কী?

শিশুরা যখন থেকে কথা বলতে শুরু করে তখন থেকেই তারা তাদের দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো নিয়ে সচেতন হতে থাকে। এবং সেগুলোর নামও সঠিকভাবে বলতে শুরু করে। নিজেদর জননাঙ্গ সম্পর্কেও শিশুদেরকে ছোটবেলা থেকেই জানা উচিৎ। ফলে শিশুদেরকে কেউ বাজেভাবে স্পর্শ করলে তারা স্পষ্ট করে বলতে পারবে যে তাদের কোন অঙ্গে স্পর্শ করা হয়েছিল।

শিশুকে শেখান, তাদের জননাঙ্গ, মলদ্বার, স্তন এবং স্তনবৃন্ত এগুলো তাদের একান্তই ব্যক্তিগত অঙ্গ। আর শিশুর মুখমণ্ডলও তার একান্তই ব্যক্তিগত অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হয়।

শিশুকে শেখান যে, তাদের একান্তই ব্যক্তিগত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোতে স্পর্শ করার অধিকার নেই কারো। কেউ যদি সেগুলো স্পর্শ করে তাহলে তারা যেন বিশ্বস্ত প্রাপ্তবয়স্ক লোকদের কাছে তা বলে দেয়। আর তাদেরকে বারবার এ বিষয়টিও শেখান যে, বিশ্বাস না করা পর্যন্ত তাদেরকে তাদের অভিযোগের বিষয়টি বারবার বলে যেতে হবে। শিশুদের বয়স ৩ বছর পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদেরকে এমন পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন যাদেরকে তারা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারবে।
শিশুকে শেখান যে, কেউ যদি তাদের একান্ত ব্যক্তিগত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো দেখতে চায় বা স্পর্শ করতে চায়, নিজেদের ব্যক্তিগত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো তাদেরকে দেখাতে চায় বা ছবি দেখাতে চায়, তা ঠিক নয়। এমনটা ঘটলে তারা যেন বিশ্বস্ত প্রাপ্তবয়স্ক লোকদের কাছে তা বলে দেয় তাও শেখান।

এছাড়া শিশুদেরকে অনুভূতির বিষয়েও শিক্ষা দিন। তাদেরকে শেখান, সুখ, দুঃখ, রাগ ও উত্তেজিত হওয়ার মানে কী। শিশুদেরকে নিজেদের অনুভূতিগুলো প্রকাশেও উৎসাহিত করুন।

“নিরাপদ” বা “অনিরাপদ” বোধ করার ব্যাপারেও শিশুকে শেখান। এছাড়া বিভিন্ন অনুভূতির সঙ্গে যে আবেগগত ভিন্নতা রয়েছে তাও শিক্ষা দেন শিশুদেরকে। উদাহরণত, নিরাপদ বোধ করলে সুখের অনুভূতি হতে পারে এবং ভেতরে উষ্ণ বোধ করতে পারে। অন্যদিকে, অনিরাপদ বোধ করলে তারা অতঙ্কিত হতে পারে এবং পেটের ভেতর মোচড় দিয়ে অসুস্থ বোধ করতে পারে। এছাড়া হৃদকম্পন বেড়ে যাওয়া, হাত ঘামানো, কান্নার অনুভূতি হওয়া প্রভৃতিও নিরাপত্তাহীনতার বোধ থেকেই ঘটে তাও শেখান।
শিশুরা বড় হতে থাকলে তাদেরকে শেখান যে কোনো কিছুই গোপন রাখা ঠিক নয়।

শিশুদেরকে শেখান বিশেষ বিশেষ কিছু সময়ে তাদের একান্তই ব্যক্তিগত অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো প্রয়োজনে কেউ চাইলে স্পর্শ করতে পারে। যেমন তারা যখন অসুস্থ হবে তখন ডাক্তার চাইলে তাদের একান্ত ব্যক্তিগত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো স্পর্শ করতে পারেন। শিশুদেরকে শেখান তাদের ব্যক্তিগত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো কেউ স্পর্শ করলে তাদের “না” বলার পুর্ণ অধিকার আছে বা তাদের বাহু এবং হাত দিয়ে বাধা দেওয়ার অধিকার আছে।

শিশুদেরকে শেখান যে তারাই তাদের দেহের একমাত্র মালিক। এবং তারাই তাদের দেহের বস। আর তাদের দেহের চারদিকে একটি অদৃশ্য শরীর বেষ্টনী আছে। সকলেরই এই বেষ্টনী থাকে এবং ইচ্ছা না হলে কাউকে তাদের জড়িয়ে ধরতে বা চুমু খেতে হবে না। তার বদলে বরং তারা হাত তুলে হাই ফাইভ বা হ্যান্ডশেক করতে পারে।
খুব অল্প বয়স থেকেই শিশুদেরকে শেখান যে, যে কোনো বিষয়েই তাদের খোলামেলা কথা বলা উচিৎ। আর আজকের এই রমরমা প্রযুক্তির যুগে শিশুরা অনেক জিনিসই দেখবে। এ ক্ষেত্রে আপনি যা করতে পারেন তা হলো তারা যেন ঘাবড়ে না যায় তা নিশ্চিত করা। আপনি হয়ে উঠুন তাদের আশ্রয়স্থল। আর একটা কথা মনে রাখবেন শৈশব এখন আর আগের মতো সহজ-সরল নেই। সুতরাং দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং চ্যালেঞ্জিং এই বিশ্বে টিকে থাকার জন্য শিশুদেরকে প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো আমাদের শেখাতে হবে।

শিশুদের যৌন নিপীড়িত হওয়ার লক্ষণগুলো কী?

একটি বা দুটি লক্ষণ দেখেই অনুমান করা সম্ভব নয় আপনার শিশুটি যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। তবে বারবার যদি এই লক্ষণগুলো দেখা যায় তাহলে সতর্ক হন এবং আরো অনুসন্ধান চালান।

শিশুদের যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার লক্ষণগুলো হলো, নিজেদের বা অন্যদের জননাঙ্গ নিয়ে বারবার আগ্রহ প্রকাশ করা বা একান্ত ব্যক্তিগত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো স্পর্শ করতে চাওয়া। অন্য শিশুদের সঙ্গে “যৌন খেলা” করতে চাওয়া। বারণ করা সত্ত্বেও অনবরত হস্তমৈথুন করা। উত্তেজনামূলক এবং উন্নত যৌন আচরণ, পুতুল বা খেলনার সঙ্গে যৌনতামূলক খেলা যার মধ্যে যোনি বা পায়ুপথ দিয়ে কোনো বস্তু ঠেলে ঢোকানোর মতো আরচণও অন্তর্ভুক্ত।

অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে, অনবরত দরজায় উঁকি দেওয়া, ব্যক্তিগত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রদর্শণ, প্রাপ্ত বয়স্কদের জনননাঙ্গ বা অপরিচিত শিশুদের জননাঙ্গের বিপরীতে নিজের জননাঙ্গ ঘষাঘষি করা। অনবরত নোংরা কথা বলা। যৌন তৎপরতার বিবরণ দেওয়া বা বয়সের তুলনায় বেশি যৌনায়িত আচরণ করা এবং যৌন তৎপরতার ছবি আঁকা বা গেম খেলা। শরীর থেকে তীব্র কটু গন্ধ বের হওয়া, মুখের চারপাশে ঘা, জননাঙ্গে আঁচড়, কালশিটে বা রক্তপাত; স্তন, পশ্চাদ্দেশ, তলপেট ও রানে আচঁড় বা কালশিটে। প্রত্যহৃত বা উদ্বেগপূর্ণ আচরণ। কোনো কিছু গোপন করে রাখার প্রবণতা, বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার সময় পুরোদেহে ঢেকে রাখার মতো পোশাক পরা, পশ্চাদমুখী আচরণ, যেমন বিছানা নোংরা করা বা ভিজিয়ে ফেলা, আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন, যেমন শান্ত শিশু থেকে হঠাৎই রাগী শিশুতে পরিণত হওয়া, ক্ষুধার অনুভূতি বদলে যাওয়া, অর্থ এবং উপহার সামগ্রীর ব্যাখ্যাতীত সঞ্চয়, বিশেষ কোনো ব্যক্তির জায়গায় বা তৎপরতায় যেতে না চাওয়া। এসবের মাধ্যমে শিশুরা পরোক্ষে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

বয়স্ক শিশুদের মধ্যে এর লক্ষণগুলো হলো, আত্মবিনাশী আচরণ, যেমন মাদকাসক্তি, আত্মহত্যা প্রবণতা, স্ব-অঙ্গহানি, খাবার গ্রহণের রুটিনে বিশৃঙ্খলা, কিশোর গর্ভধারণ, বাড়ি থেকে অনবরত দূরে থাকা বা স্কুলে যেতে অনীহা, নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, রাগ, নিজের দেহ নোংরা হয়ে গেছে বলা, ধ্বংসাত্মক প্রবণতা, পর্ন দেখার আগ্রহ মৌখিক যৌনতায় আগ্রাসী কটু বাক্য বলা।

সূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

শিশুর স্কুল থেকে শেখা বদভ্যাস থামাবেন যেভাবে

স্কুল থেকে শিশুরা জীবনের দিকনির্দেশনা পেয়ে থাকে। প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নিয়মকানুনবিস্তারিত পড়ুন

শিশুকে ‘ডব্লিউ পজিশনে’ বসতে বারণ করুন

শিশুদের বসার অন্যতম একটি ভঙ্গিমা হচ্ছে ‘ডব্লিউ পজিশন’। এক্ষেত্রে তারাবিস্তারিত পড়ুন

ছুটিতেও চলুক জ্ঞানচর্চা

সন্তানের স্কুলের ছুটি হয়ে গেছে। এইসময় তাকে নিয়মের মধ্যে নাবিস্তারিত পড়ুন

  • রাতে জন্ম নেয়া শিশুরা কেন ব্যতিক্রম? জেনে নিন
  • রাতে জন্মানো শিশুরা যেমন হয়
  • ধুলায় বাড়ছে শিশুর কাশি; কী করবেন?
  • বিশেষ যত্নে বড় করুন প্রতিবন্ধী শিশুকে
  • আপনার যে ভুলে সন্তান ক্লাসে অমনোযোগী!
  • যেভাবে আপনার কন্যা শিশুটির ক্ষতি করছে এ যুগের খেলনা
  • ‘আমি স্বাধীনতা দেখমু, আমি যুদ্ধ করুম’
  • শীতে শিশুর প্রস্তুতি
  • শিশুর নাকে পানি ঝরার সমস্যায় কী করবেন?
  • শীতে নবজাতকের যত্নে কী করবেন
  • ঋতুবদলের সময় শিশুদের একদিন পরপর গোসল করান