শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

মুসলিম যাত্রীদের হয়রানি

নাইন-ইলেভেনের পর পৃথিবীটাই বদলে গেছে। দেশে দেশে চলছে মুসলিমবিরোধী তাণ্ডব, ধরপাকড়। মুসলমানদের স্পষ্টত দু’টি ভাগে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। একটি অংশকে বলা হচ্ছে উদার এবং অন্য অংশকে বলা হচ্ছে গোঁড়া। তথাকথিত উদার অংশকে পাশ্চাত্যের খ্রিষ্টান বিশ্বসহ সবাই সমর্থন করছে। পাশ্চাত্যের মনমতো না হলেই বিপদ। দুঃখজনক হলেও সত্যি, পৃথিবীর দুর্ভাগ্য ও দুর্দশার জন্য সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ,
উপনিবেশবাদ ও আধিপত্যবাদ দায়ী হলেও কেউ কোনো টকশো, পত্রপত্রিকার নিবন্ধ কিংবা রিপোর্টে এসব মানবতাবিরোধী মতবাদের বিরোধিতা করছেন না। সবাই কেবল জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে ঘৃণা করছে। এসব আপদ আপনাআপনি গজিয়ে ওঠেনি এবং বিশ্বরাজনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কিংবা আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন, পাকিস্তান, সোমালিয়া ও সিরিয়ায় বিদেশী আগ্রাসনের সাথে এসব কিছুর সম্পর্ক রয়েছে। কয়েক বছর আগে ২০০৩ সালে রাজধানী ঢাকার রাজপথে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের প্রতিবাদে স্মরণকালের বৃহত্তম বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিমানে মুসলিম যাত্রীদের ভ্রমণের কথাই ধরা যাক। বিমানে মুসলমানদের অপদস্থ করা এবং তাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন এখন যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। মাথায় হিজাব থাকলেই হলো। হিজাব পরিহিত মুসলিম মহিলা যাত্রীকে বিমান থেকে নামিয়ে তল্লাশি করা হবে এবং তাকে অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে ঠেলে দেয়া হবে। বিমানে মুসলিম যাত্রীদের সাথে ভ্রমণে অমুসলিম যাত্রীদের অকারণ আতঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে।

২০০৬ সালের ১৬ আগস্ট মালাগা থেকে মানচেস্টার অভিমুখী একটি ফ্লাইটের ব্রিটিশ যাত্রীরা বিমান থেকে দুইজন এশীয় যাত্রীকে নামিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানায়। মালাগার সিভিল গার্ডের একজন মুখপাত্র জানায়, এ দুইজনের চেহারা সন্দেহের উদ্রেক করছে এবং তারা বিদেশী ভাষায় কথা বলছে। বিদেশী ভাষাকে আরবি ভাষার মতো মনে হচ্ছিল। পাইলট এ দুইজনকে বিমান থেকে নামিয়ে না নেয়া পর্যন্ত উড্ডয়ন করতে অস্বীকৃতি জানায়। বিমানে তল্লাশি চালিয়ে কোনো বিস্ফোরক অথবা সন্ত্রাসে ব্যবহার করার মতো কোনো উপকরণ পাওয়া যায়নি। উর্দুভাষী এ দুই ব্যক্তিকে মোনার্ক এয়ারলাইন্স একটি হোটেলে নিয়ে যায় এবং বিনামূল্যে তাদের খাবার দেয়। পরবর্তী ফ্লাইটে তাদের দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ দুই ব্যক্তি তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘শুধু মুসলমান হওয়ায় আমাদের বিমান থেকে নামিয়ে দেয়া হলো। মুসলমান হওয়ার অর্থ এই নয় যে, আমরা আত্মঘাতী বোমাবাজ।’

ইসলামি মানবাধিকার কমিশন এ ঘটনার জন্য ক্রমবর্ধমান ইসলামভীতিকে দায়ী করেছে। সঞ্চালক জেরি ক্লেইন তার একটি টকশোতে মুসলমানদের বাজুবন্দ অথবা উল্কির মতো শনাক্তকারী চিহ্ন পরিধান করার প্রস্তাব দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে নাৎসি জার্মানিতে ইহুদিদের পরিচয়সূচক চিহ্ন পরতে হতো।

মানচেস্টার থেকে যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখী একটি বিমানে ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপে যাওয়ার পথে একজন যাত্রীকে বিমান থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত এ ব্যক্তি জানান, মুসলিম পাইলট হওয়ায় তাকে সন্দেহ করা হয়। তার নাম আরবি। তিনি বিমান চালাতে জানেন। ২০০৬ সালের ২১ নভেম্বর নিরাপত্তাজনিত কারণে যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনার মিনিয়াপোলিস সেন্ট পল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস
এয়ারওয়েজের ফ্লাইট-৩০০ থেকে জোর করে ছয়জন ইমামকে নামিয়ে দেয়া হয়েছিল। তারা হলেনÑ দিদমার ফাজা, মোহাম্মদ সাঈদ মিতওয়াল্লি ইব্রাহিম, মারওয়ান সাদেদিন, ওমর শাহীন, আহমদ আল-শাকিরাত ও মোহাম্মদ সোলায়মান। কয়েকজন যাত্রী ও বিমানের ক্রু বিমানে মুসলিম যাত্রীদের উপস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। ক্যাপ্টেন উড্ডয়ন বিলম্বিত করেন এবং বিমান ত্যাগে ইমামদের অনুরোধ জানাতে নিরাপত্তা কর্মীদের তলব করেন। ইমামরা অস্বীকৃতি জানালে ক্যাপ্টেন পুলিশ ডাকেন। তিন ঘণ্টা পর ইমামদের রেখেই বিমান উড্ডয়ন করে। ইমামদের গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অবশ্য পরে তাদের মুক্তি দেয়া হয়। কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্সসহ (কেয়ার) যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম সংগঠনগুলো বিমান সংস্থার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করে বলেছে, ধর্মীয় বৈষম্যের কারণেই ইমামদের বিমান থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে আমেরিকায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ফুটে উঠেছে। অন্য দিকে তদন্তকারী ও পুলিশ জানিয়েছে, এয়ারলাইন্স ও গ্রাউন্ড ক্রু বিমান থেকে ইমামদের বের করে দিয়ে নিরাপত্তা উদ্বেগে ‘যথাযথভাবে’ সাড়া দিয়েছে।

ভারতের খ্যাতনামা মুসলিম অভিনেতা শাহরুখ খান একবার ২০০৯ সালে এবং আরেকবার ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে হয়রানির শিকার হয়েছেন। বিশ্বের সবাই তাকে এক নামে চিনলেও ২০১২ সালের ১৪ এপ্রিল তাকে নিউ ইর্য়ক বিমানবন্দরে দুই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের একটি অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য শাহরুখ খান একটি ছোট ব্যক্তিগত বিমানে নিউ ইর্য়ক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। তার সাথে ছিলেন ভারতের রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানির স্ত্রী নীতা আম্বানি এবং আরো কয়েকজন। অভিবাসন কর্মকর্তারা নীতা আম্বানি এবং অন্যদের ছেড়ে দেন। আটকা পড়েন কেবল শাহরুখ খান। তাকে জিজ্ঞেস করা হয় তিনি কত ফুট লম্বা। শাহরুখ বানিয়ে বলেন যে, তিনি পাঁচ ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা। মনের দুঃখে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে, আপনার রঙ কি? তাহলে বলব শ্বেতাঙ্গ
২০০৯ সালের ১৫ আগস্ট শিকাগোতে ভারতের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগদান করতে যাওয়ার পথে শাহরুখ খানকে নিউজার্সির লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। কম্পিউটারের সতর্কীকরণ তালিকায় শাহরুখ খানের নাম ভেসে ওঠায় মার্কিন অভিবাসন কর্মকর্তারা তাকে আটক করেন। তাকে তার মোবাইল ফোনও ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হয়নি। ভারতীয় কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপে শাহরুখ খানকে মুক্তি দেয়া হয়। তার নামের শেষে ‘খান’ দেখে মার্কিন গোয়েন্দারা সন্দেহ করেছিলেন, তিনি একজন ‘সন্ত্রাসী’ মুসলমান। শাহরুখ খানের এই তিক্ত অভিজ্ঞতার পটভূমিতে ২০১০ সালে ভারতে নির্মাণ করা হয় ‘মাই নেম ইজ খান’ নামে একটি হিট ছবি।

২০১১ সালের ৫ মে এয়ারট্রান এয়ারওয়েজ ফ্লোরিডায় একটি বিমান থেকে ৯ জন মুসলিম যাত্রীকে নামিয়ে দেয়। সহযাত্রীরা ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে সন্দেহ করায় তাদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। মুসলিম পুরুষ যাত্রীদের মুখে ছিল দাড়ি এবং মহিলাদের মাথায় হিজাব। ইরফান নামে একজন মুসলিম যাত্রী বিমানে কোথায় বসবেন তা তার স্ত্রী ও শ্যালিকার কাছে জানতে চান। ইরফানের শ্যালিকা তাকে বিমানের পেছনে বসার পরামর্শ দেয়। দুইজনের মধ্যে সিটে বসা নিয়ে কথাবার্তা হওয়ার সময় অন্য যাত্রীরা তাদের দিকে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। বিমানে আসন গ্রহণ করার পর ফেডারেল এয়ার মার্শালরা এগিয়ে আসে এবং তাদের বিমান থেকে নামিয়ে দেয়। দু’টি মুসলিম মানবাধিকার গ্রুপ এ বিমান সংস্থার এমন কাজের নিন্দা করে। মুসলিম পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল খোলা তদন্ত অনুষ্ঠানের জন্য ফেডারেল কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানায়। ‘কেয়ার’ মার্কিন পরিবহন দফতরে অভিযোগ দায়ের করে। তারা বলেছেন, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বিমান সংস্থার কর্তব্য এবং ধর্ম, বর্ণ অথবা জাতীয় পরিচিতির ভিত্তিতে কোনো যাত্রীর প্রতি বৈষম্যপূর্ণ আচরণ করা যায় না।

টেনিসির নাশভিলে অনুরূপ একটি ঘটনা ঘটেছে। ২০১১ সালের ৭ মে পাইলট আপত্তি জানালে ডেল্টা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান থেকে দুইজন মুসলিম যাত্রীকে নামিয়ে দেয়া হয়। বিমানটি মেমফিস থেকে শারলটে যাচ্ছিল। মেমফিসের ফেডারেল আদালতে পেশকৃত মামলার বিবরণে বলা হয়, মাসুদুর রহমান ও মোহাম্মদ জগলুল মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যবিরোধী একটি সম্মেলনে যোগ দিতে শারলট যাচ্ছিলেন। মেমফিস বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ইন্সট্রাক্টর মাসুদুর রহমানের পরনে ছিল ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পোশাক এবং মোহাম্মদ জগলুলের পরনে ছিল পাগড়িসহ আরবীয় পোশাক। এ দুইজন নিরাপত্তা গেট অতিক্রম করেন এবং বিমানে আরোহণের জন্য লাইনে দাঁড়ান। এ সময় তাদের লাইন থেকে সরিয়ে নেয়া হয় এবং দ্বিতীয় নিরাপত্তা গেট অতিক্রমে বাধ্য করা হয়। ভ্রমণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তাদের লাগেজ ও জিনিসপত্র তল্লাশি করা হয়। বিমানে ওঠার পর নামিয়ে এনে পুনরায় কাপড় খুুলে তাদের দেহ তল্লাশি করা হয়। বিমানে আরোহণের অনুমতি দেয়া হলেও পাইলট তাদের বহনে অস্বীকৃতি জানান। দুইজন যাত্রী ছাড়া বিমান টার্মিনাল ছেড়ে যেতে শুরু করে। বিমানের অজ্ঞাতনামা একজন কর্মকর্তা বিমানটিকে ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু বিমানটি দ্বিতীয়বার ফিরে যায়। কর্মকর্তা বিমানে ওঠে পাইলটের সাথে কথা বলেন। পাইলট জানান যে, তিনি মাসুদুর রহমান ও জগলুলকে বিমানে আরোহণের অনুমতি দেবেন না। কেননা বিমানে তাদের উপস্থিতিতে অন্য যাত্রীরা অস্বস্তি বোধ করবে।

২০১৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ডেল্টা এয়ারলাইন্সের আরেকটি ফ্লাইটে একজন মুসলিম মহিলা মাথায় হিজাব পরায় অসম্মানজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। মিশিগানের এ মহিলার নাম দারলানি হিদা। চার সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে ডেল্টা এয়ারলাইন্সের ১৫৭৬ নম্বর ফ্লাইটে তিনি আরোহণ করেন। তার সর্বকনিষ্ঠ সন্তানের বয়স মাত্র ৯ মাস। এ শিশুটি অসুস্থ হওয়ায় কান্নাকাটি করছিল। এতে একজন শ্বেতাঙ্গ মহিলা যাত্রী খুব বিরক্ত হন। হিদার সাথে তার তর্কাতর্কি শুরু হয়। হিদার মাথায় হিজাবের প্রতি ইঙ্গিত করে শ্বেতাঙ্গ মহিলা বলেন, ‘এটা আমেরিকা।’ দুইজন মহিলাকে তর্ক করতে দেখে ডেল্টা ফ্লাইটের একজন স্টাফ হিদাকে বিমানের পেছনে বসতে বলে। অন্য কয়েকজন যাত্রী হিদার সমর্থনে এগিয়ে আসে। হিদা বলেন, ‘আমাকে পদে পদে প্রমাণ করতে হয় যে, আমি সন্ত্রাসী নই।’

২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে ইস্তাম্বুলগামী ইউনাইটেড এয়ার লাইন্সের মুসলিম মহিলা যাত্রী কামেলা রাশেদকে হয়রানি করা হয়। নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা কামেলা রাশেদ ছুটি কাটাতে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যাচ্ছিলেন। চেকিং শেষ হলে তিনি বিমানে ওঠেন। বিমান উড্ডয়ন করার আগ মুহূর্তে এফবিআইয়ের এক এজেন্ট তাকে জোর করে বিমান থেকে নামিয়ে আনে। তারপর তাকে সারা দিন বিমানবন্দরে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তার বিমান যাত্রা বাতিল এবং পাসপোর্ট জব্দ করে। মাথায় হিজাব থাকায় কামেলা রাশেদের সাথে এ ধরনের আচরণ করা হয়। কামেলা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন মুসলমানদের জন্য একটি ‘সামরিক দেশ’ হয়ে গেছে। কামেলা হলেন একজন শিল্পী, শিক্ষিকা, স্টানফোর্ড গ্র্যাজুয়েট ও ফুলব্রাইট স্কলার।

২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর বিবিসির খবরে বলা হয়, লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে এসে পৌঁছানোর পর একজন মুসলিম মহিলাকে ১৩ ঘণ্টা আটক করে রাখা হয়েছিল। অষ্টাদশী এ মুসলিম তরুণীর নাম আয়ান মোহাম্মদ। তিনি জানান, প্যারিসে বোমা হামলার পর তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি ভাবতে পারিনি যে, আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটি রুমে আটক রাখা হবে। মুসলমান হওয়ায় আমাকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়।’ আয়ান মোহাম্মদ লিচেস্টারে তার পরিবারের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে প্রথম যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে কানাডার টরোন্টো বিমানবন্দরে নিউ ইয়র্ক অভিমুখী একটি ফ্লাইট থেকে দুই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূতসহ চারজনকে গায়ের রঙ, পোশাকের ধরন ও চেহারায় মুসলমান মনে হওয়ায় আমেরিকান এয়ার লাইন্স কর্র্তৃপক্ষ জোর করে বিমান থেকে নামিয়ে দেয়। চারজনের মধ্যে একজন ভারতীয় শিখ। ২০১৬ সালের ১৮ জানুয়ারি নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রুকলিন ফেডারেল আদালতে এজন্য আমেরিকান এয়ার লাইন্সের বিরুদ্ধে ৯০ লাখ ডলারের ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করা হয়। বাদিরা হলো ফাহিমুল আলম, এসকে (নামের আদ্যাক্ষর), ভারতীয় শিখ শান আনন্দ এবং মধ্যপ্রাচ্যের ডব্লিউএইচ (নামের আদ্যাক্ষর)। তারা সবাই ব্রুকলিনের বাসিন্দা। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ফ্লাইট ক্রু তাদের উপস্থিতিকে হুমকি বলে মনে করছিল। শ্বেতাঙ্গ এক মহিলা এ চারজনকে বিমান থেকে নামিয়ে দেয়ার জন্য ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টের মনোযোগ আকর্ষণ করে। ফাহিমুল আলমের বাবা নিউ ইয়র্কে সন্দীপ সমিতির সভাপতি এবং এসকের বাবা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা। অ্যাটর্নি আবুশি সাংবাদিকদের বলেন, তার মক্কেলরা মনে করেন, মুসলমান বলে তাদের সাথে এ ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে।

২০১৫ সালের ১১ ডিসেম্বর একজন মুসলিম মহিলা সাউথ-ওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে শিকাগো থেকে নিউ মেক্সিকোর আলবুকার্ক বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন। গিল পার্কার পাইনি নামে ৩৭ বছরের একজন শ্বেতাঙ্গ নিজের আসন থেকে উঠে এসে মুসলিম মহিলা যাত্রীর মাথা থেকে হিজাব টেনে খুলে ফেলে এবং বলে, ‘এটা আমেরিকা।’ মুসলিম মহিলা যাত্রীর নাম শুধু ‘কেএ’ বলে উল্লেখ করা হয়।

অমুসলিম মহিলারাও নিষ্কৃতি পাচ্ছেন না। তাদের মুসলিম মনে করে হয়রানি করা হচ্ছে। নিউ ইয়র্কে কর্মরত ভারতীয় কন্স্যুলেটের মহিলা কর্মকর্তা দেবযানীর ওপর দৈহিক নির্যাতনের কাহিনী সবাই জানে। একইভাবে আরেকজন ভারতীয় হিন্দু মহিলা যাত্রীকে বিমানবন্দরে এমনকি বিবস্ত্র হতে বলা হলে তিনি কাপড় খুলতে অস্বীকৃতি জানান।
লেখক : সাংবাদিক

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?