সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পর্যালোচনায় ‘রানা প্লাজা’ মুক্তিতে বাধা কাটলেও এই চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনে স্থগিতাদেশ দিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্র নিয়ে সেন্সর আপিল কমিটিতে আপিল আবেদন হয়েছে। এই আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চলচ্চিত্রটি প্রদর্শন সারাদেশে স্থগিত করে আদেশ জারি করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়।

এর আগে ‘রানা প্লাজা’র মুক্তির জন্য দুই দফায় তারিখ ঠিক করে প্রচার চালানো হলেও আদালতের নির্দেশনায় তা আটকে যায়। কিন্তু গত ১৭ সেপ্টেম্বর ‘রানা প্লাজা’ চলচ্চিত্র নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পর্যালোচনার ওই আবেদন খারিজ হলে চলচ্চিত্রটি মুক্তিতে সব বাধা কাটে।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বহুতল ভবন রানা প্লাজা ধসে পড়লে শিল্পক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওই ঘটনায় নিহত হন ১ হাজার ১৩৫ জন, আহত হন আরও হাজার খানেক শ্রমিক, যারা ওই ভবনের পাঁচটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।

ধসের ১৭ দিনের মাথায় ১০ মে বিকালে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে রেশমা আক্তারকে জীবিত উদ্ধার করা হলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ওই বছরই রানা প্লাজা ধস ও রেশমাকে উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের উদ্যোগ নেন চলচ্চিত্র নির্মাতা নজরুল ইসলাম খান।

এতে পোশাক শ্রমিক ‘রেশমা’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী পরী মনি। তার বিপরীতে ‘টিটু’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা সায়মন সাদিক। বিভিন্ন দৃশ্যে নিয়ে আপত্তিতে চলচ্চিত্রটি ছাড়পত্র দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর গত ১৬ জুলাই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড ‘রানা প্লাজা’কে সনদপত্র দেয়। ৪ সেপ্টেম্বর ৫০টির বেশি প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্রটি মুক্তি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে পোস্টারও ছাপায় প্রযোজনা সংস্থা।

কিন্তু বাংলাদেশ ন্যাশনাল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স এমপ্লয়িজ লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলামের করা একটি রিট আবেদনে ‘রানা প্লাজা’র মুক্তি আটকে যায়। তার অভিযোগ ছিল, এই সিনেমায় ‘ভীতিকর চিত্র’ দেখানোর পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর নাম ব্যবহার করা হয়েছে, যা ‘আইনের লঙ্ঘন’।

ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে হাই কোর্ট গত ২৪ অগাস্ট এ চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী ও সম্প্রচারে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয়। সেই সঙ্গে সেন্সর বোর্ডের দেওয়া সনদের কার্যকারিতা স্থগিত করে রুল দেওয়া হয়।

প্রযোজক শামীমা আক্তার ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ গত ৬ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেয়। এতে ‘রানা প্লাজা’র মুক্তির পথ খোলে; ১১ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করে নতুন করে প্রচারও শুরু হয়।

কিন্তু মুক্তির ঠিক আগের দিন রিট আবেদনকারী পক্ষ আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন নিয়ে চেম্বার আদালতে যায়। তাদের বক্তব্য শুনে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী চলচ্চিত্রটির ওপর ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন এবং বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

এর ধারাবাহিকতায় ওই রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগে উঠলে তা খারিজ করে দেয় আদালত।