সোমবার, মে ২০, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

সুরঞ্জিত সেনকে যে কারণে আমরা মিস করব

আমীন আল রশীদঃ- ‘আমি ভাটির দেশের মানুষ। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা আমারে ট্রেনে উঠায়া দিছেন।’ রেলমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে এ কথা বলেছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত; যাকে মিস করবে সংসদের অধিবেশন কক্ষের চেয়ার। রাজনৈতিক বিষয়ে তীর্যক মন্তব্য, সিরিয়াস বিষয় নিয়ে রসিকতা, বিশেষ করে পার্লামেন্টারি ডিবেট বা সংসদীয় বিতর্কের প্রসঙ্গ এলেই আমরা মিস করবো এই বর্ষীয়ান রাজনীতিককে।

নবম জাতীয় সংসদের পুরো সময়টা এই রাজনীতিককে খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। অনেকে সমালোচনা আর বিতর্কের পরও দেশের সংসদ, সংবিধান আর রাজনীতির নানা বিষয়ে তার যে প্রজ্ঞা, যে জ্ঞান, যে পর্যবেক্ষণ-তাতে তিনি অনেকের চেয়েই ছিলেন অগ্রসর। যে সাংবাদিকরা সংসদের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করেন, তারা জানেন, কোন রাজনীতিকের জ্ঞানের দৌড় কত।

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর জন্য গঠিত বিশেষ কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তই ছিলেন সাংবাদিকদের মূল সোর্স বা খবরের সূত্র। অন দ্য রেকর্ডে তিনি সংসদ ভবনের মিডিয়া সেন্টারে যা বলতেন, অফ দ্য রেকর্ডে বলতেন আরও অনেক কিছু। যা আমরা কোনোদিন লিখিনি বা লেখা সমীচীনও নয়।

পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে লেখা আমার বইয়ের মোড়ক উন্মোচনও করেছিলেন তিনি-যেখানে উপস্থিত ছিলেন দেশের সংবিধান ও রাজনীতি বিষয়ে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ, অনেক সাংবাদিক। তাদের সামনেই এরকম বর্ষীয়ান রাজনীতিক আমার মতো একজন মানুষের কাজের যে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, তা অভাবনীয়।

সময়ে-অসময়ে ফোন না করেই আমরা চলে যেতাম সংসদ ভবনের ভেতরে তাঁর কার্যালয়ে। এরজন্য কোনোদিন অনুমতির প্রয়োজন ছিল না। এমনকি ইন্টারকমে ফোনও করতাম না। কারণ অধিবেশন না চললে ওই সময়টায় তিনি যে তার রুমে আছেন, সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত থাকতাম। রুমের সামনে গেলে তার সহকারী কামরুল হক বলতেন, ‘যান…ভিতরে আছেন।’

আমাদের দেশে ওই অর্থে পার্লামেন্টারি ডিবেট বা সংসদীয় বিতর্কের সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। সংসদে বিল নিয়ে যে পরিমাণ দীর্ঘ আলোচনা হওয়া দরকার, তাও হয় না। সমসাময়িক ইস্যুতে সংসদ সদস্যরা পয়েন্ট অব অর্ডারে অনেক বিষয়ে কথা বললেও অনেক সময়ই তা বিধিমোতাবেক হয় না। বাস্তবতা হলো, সংসদ সদস্যদের একটা বড় অংশই সংসদের কার্যপ্রণালিবিধি সম্পর্কে পরিস্কার জানেন না; সংবিধান তো দূরে থাক। সেই ভিড়ের মধ্যে খুব সামান্য যে কজন মানুষ ছিলেন একদমই স্রোতের বাইরে এবং ব্যতিক্রম-সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে উজ্জ্বলতম।

জাতীয় সংসদের অধিবেশনকে প্রাণবন্ত করে রাখতেন হাতে গোনা যে কয়জন মানুষ, সেই তালিকার শীর্ষে থাকা মানুষটিকে হারিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমরা অনেকেই মর্মাহত। কিন্তু আমার মনে হয় তাকে সবচেয়ে বেশি মিস করবে খোদ জাতীয় সংসদ।

তার একটা রসিতার উদাহরণ দিই। কোনো একটা বিষয়ে যুদ্ধাপরাধে দণ্ড পাওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘মাননীয় স্পিকার (স্পিকার তখন আব্দুল হামিদ) বিষয়টা স্পর্শকাতর।’ তখন জবাবে সুরঞ্জিত সেন দাঁড়িয়ে বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, কে কখন কী স্পর্শ করলে কাতর হয় তা তো বলা মুশকিল।’

রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেয়ার পর জাতীয় সংসদ যেমন সাবেক স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের রসিকতা মিস করে, তেমনি সুরঞ্জিত সেনের মৃত্যুর পর সেই শূন্যতাটি আরও দীর্ঘ হলো। পরকালে ভালো থাকবেন দাদা।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। ‘আমাদের কন্ঠস্বর’ এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?