শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

আসুন আমরা চুপ থাকি

বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নিরাপদ জায়গার একটি আবসিক হলের ভেতরে শিক্ষার্থীর লাশ পড়ে থাকছে। যে হলের গেটে সর্বক্ষণ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন দুজন পুলিশ ও দুজন প্রহরী। হল গেটে রয়েছে সিসি ক্যামেরা। এ ছাড়া সব মিলিয়ে সর্বদা অন্তত তিন শতাধিক মানুষ থাকেন হলটিতে। বলার অপেক্ষা রাখে না-হলটি একটি নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে রয়েছে। তাহলে এমন স্থানেও শিক্ষার্থীর লাশ পড়ে থাকে কীভাবে!

নবাব আবদুল লতিফ নামের ওই আবাসিক হলটিতে ৩২৫ জন ছাত্রের থাকার ব্যবস্থা আছে। হলটির প্রতিটি কক্ষে দুজন করে শিক্ষার্থী থাকতে পারেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ওই ছাত্র হলটিতে প্রায় সব কক্ষে মাত্র দুজন করে শিক্ষার্থী থাকেন। হলটিতে আবাসিক শিক্ষার্থীরা একটু বাড়তি সুবিধা পান বৈকি। তেমন একটি কক্ষের আবাসিক ছাত্র ছিলেন মোতালেব হোসেন লিপু। অন্য ছাত্রদের মতো তিনিও পড়াশোনা করতেন ও বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন।

আবাসিক হলগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার প্রথম স্থান বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। যেখানে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পূর্ণ শিক্ষা নিয়ে থাকেন। একে অপরের সঙ্গে মিশে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। কিন্তু দিন দিন সেই সুবিধা অনেকাংশেই কমে যাচ্ছে।

সব আবাসিক হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক বা সহযোগী অধ্যাপককে প্রধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রাধ্যক্ষের সহযোগী হিসেবে আরো কয়েকজনকে হলে আবাসিক শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা। লতিফ হলেও হয়তো তেমটি হচ্ছে। এই শিক্ষকদের হলের আবাসিক শিক্ষার্থীর নানা সমস্যা সমাধানসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করতেই সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সব শিক্ষার্থীর কক্ষে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রয়োজনে হলে উপস্থিত থাকার জন্যই প্রশাসন থেকে শিক্ষকদের সেখানে পাঠানো হয়।

তবে হলের বর্তমান যে চিত্র আমাদের সামনে উঠে আসছে তা পুরো উল্টো। হল প্রাধ্যক্ষ দায়িত্ব নেওয়ার পর সব শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিচিত হবেন এটাই তো হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকরা দায়িত্ব নেওয়ার পর কখনই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না হয়তো। শিক্ষার্থীরা হলের প্রাধ্যক্ষ কিংবা আবাসিক শিক্ষকদের নাম পর্যন্তও জানেন না। প্রাধ্যক্ষরা দায়িত্ব নেওয়ার পর হল অফিস ছাড়া কোনো শিক্ষার্থীর কক্ষেই যান না। এমনকি মাসে একদিনও হলে যাননি এমন প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষক অনেকেই হয়তো আছেন। যেখানে প্রতিদিন অন্তত একবার হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিষয় তাদের খোঁজ নেওয়ার কথা ছিল। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত হলে থাকছেন কি না সে ব্যাপারেও তাঁদের দৃষ্টি রাখার তাগিদ ছিল।

এসব দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে এখন যে অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনার সৃষ্টি হয়েছে তা এক দিনের ঘটনা নয়। এখন হলগুলোতে অবস্থান করতে শিক্ষার্থীরা আর নিরাপদ মনে করছেন না। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে না পারলে হয়তো আগামীতে আরো বড় মাশুল গুনতে হবে আমাদের।

লিপু বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে। তিনি গরিব মা-বাবার খুব আদরের সন্তান ছিলেন। কিছু দিন আগেও শুনেছি তিনি টিউশনি করিয়ে নিজের খরচ চালাতেন। এরপর অবশ্য বেশ কিছু দিন তাঁর সঙ্গে আমার দেখা বা কথা হয়নি। সর্বশেষ গত ২০ অক্টোবর সকালে তাঁকে দেখলাম। তখন তিনি একটা নর্দমাতে দক্ষিণ পাশে মাথা দিয়ে শুয়ে ছিলেন। সকাল থেকে অনেকেই হয়তো তাঁকে ডেকেছে। সেই নর্দমা থেকে উঠতে বলেছে। কিন্তু লিপু সাড়া দেননি। তিনি কখনই আর কারো ডাকে সাড়া দেবেন না। তাঁকে মানুষরূপী কিছু পশু হয়তো বাধ্য করেছে সেই চির নিদ্রায় চলে যেতে।

বিনিময়ে লিপুর মা-বাবা ও আত্মীয়স্বজনসহ আমাদের অনেককেই উপহার দিয়েছেন কান্না। যে কান্না হৃদয় থেকে রক্ত বের করে। যারা লিপুর স্বপ্নকে ভেঙে দিল, তাঁর মা-বাবার বুক চিরতরে খালি করল তাদের কি বিচার আমরা চাইব না? লিপু কি এই বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্য নন? তাহলে কেন আমাদের এই নীরবতা? কেন আমরা লিপু হত্যার বিচার দাবিতে সোচ্চার হচ্ছি না। কেন?

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা অনেক সময় চুপ থাকেন। তখন শিক্ষক বুঝতে পারেন তাঁর ওই ছাত্র বা ছাত্রীর কাছে উত্তরটি অজানা। তাই সে চুপ আছে। আজ আমরাও কি আগে থেকেই জেনে ফেলেছি যে দেশে কোনো হত্যার সুষ্ঠু বিচার হবে না? হয়তো সময়ের বিচারে এমন প্রশ্ন খুব অবান্তর নয়। কিন্তু তাই বলে আর কত কাল আমরা চুপ করে বসে থাকব। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী আছেন। তাঁরা কি এই ‘হত্যাকাণ্ডের’ বিচার হোক এটা চান না? যদি সবাই মিলে লিপু ‘হত্যার’ বিচার আমরা চাই তাহলে দ্রুত প্রকৃত অপরাধীরা ধরা পড়বে। এভাবে সবাই এগিয়ে এলে হয়তো এই ক্যাম্পাস এমনকি একদিন দেশ থেকেই ‘হত্যাকাণ্ড’ নামক কালোথাবা উঠে যাবে। আসুন আমরা শান্তিপূর্ণভাবে লিপু হত্যার বিচার চাই।

এর উল্টোটাও করা যেতে পারে। আসুন আমরা চুপ থাকি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজের সুবিধা হারানোর ভয়ে সমাজে চুপ থাকা এখন সব থেকে ভালো উপাদেয় হিসেবে কাজ করছে। তাহলে আমরা কেন অযথা কথা বলব। লিপু ‘হত্যার’ বিচার কেন চাইব? তিনি তো আমাদের কেউ নন। তাঁকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে তাতে আমাদের কী! এমন চিন্তাই হয়তো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকে করছেন। তাই হয়তো লিপু আমাদের থেকে চলে গেলেন। হলের মতো নিরাপদ স্থানে তাকে ‘মেরে চলে গেল হত্যাকারীরা’।

এ ঘটনায় লিপুর চাচা বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। সেই মামলায় লিপুর রুমমেটকে আজ (২৩ অক্টোবর) গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। এর আগে তিনদিন ধরে থানায় নিয়ে লিপুর রুমমেটকে জিজ্ঞাসাদ করছিল পুলিশ। তবে পুলিশ এখনো আমাদের জানাতে পারেনি লিপুর হত্যাকারী কারা। কাদের মদদে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এটা জানতে হয়তো আরো সময় লাগবে। সেই পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতেই হবে।

লেখক : সাংবাদিক ও সাবেক শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?