শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

ফেসবুক বন্ধ করতে চান কেন?

পারলে হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ করুন। সাম্প্রতিককালে যে মাধ্যমটি অপরাধীরা ব্যবহার করে সরকারকে তথা জাতিকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে, সেটি হচ্ছে এই হোয়াটসঅ্যাপ। প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে মর্মে গুজব রটিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে অপরাধীরা এই মাধ্যমটি ব্যবহার করেছে। অথচ, মাঝে মাঝেই খবর আসে যে সরকার ফেসবুক বন্ধ করে দিবে!

দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত অনলাইন নিউজ পোর্টালের বরাত দিয়ে জাতি নতুন করে জানতে পারে যে সরকার নাকি রাতে ছয় ঘণ্টা ফেসবুক বন্ধ রাখবে! যদিও মন্ত্রণালয় থেকে পরে প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়েছে যে ফেসবুক বন্ধের কোনো চিন্তাভাবনা বা সিদ্ধান্ত সরকারের নেই।

এর আগে, আমরা দেখেছি, রাষ্ট্রীয় স্বার্থের কথা বলে ফেসবুক বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকার শুধু ফেসবুক কেন, যে কোনো মাধ্যমই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে, রাষ্ট্রের সে অধিকার আছে এবং আমি মনে করি থাকা উচিত। কিন্তু ঠুনকো যুক্তিতে বা কারণ দেখিয়ে যখন তখন এটা সেটা বন্ধ করে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

বস্তুত পশ্চিমা আধিপত্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যে কয়টি রাষ্ট্র পৃথিবীতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধন করেছে, তারা শুরু থেকেই তথাকথিত ‘উদারনীতির’ বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আদর্শের প্রতিফলন ঘটাতে সামাজিক মাধ্যমসহ সবধরণের গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে নিজেদের মত করে সব করতে চেয়েছে। যেমন চীন। যাইহোক, সেটা ভিন্ন বিষয়। আমরা চীন নই, আমরা বাংলাদেশ।

পৃথিবীর যে কয়েকটি দেশে আরও অনেক সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্য ফেসবুক অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, তার মধ্য অন্যতম বাংলাদেশ। ফেসবুক যেভাবে মানুষের যোগাযোগের ধরন এবং গতি পাল্টে দিয়েছে সেটি অভাবনীয়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নানা পেশায় নিয়োজিত মানুষের জীবনে ফেসবুক নানাভাবে পরিবর্তন এনেছে। এখন কেউ যদি শুধু নিজের ঘোরাঘুরি বা আজাইরা আড্ডার ছবি দিয়ে মনে করেন এটাই বুঝি ফেসবুকিং তাহলে বুঝতে হবে তার আসলে অন্য উৎপাদনশীল কাজের সাথে সম্পৃক্ত সে নয়, অথবা উৎপাদনশীল হওয়ার সুযোগ বা যোগ্যতা তার নেই। এতে তো ফেসবুকের কোনো দোষ নেই। কিছু পেশা আছে যেখানে ফেসবুক এখন অপরিহার্য বিষয়। এমনকী ফেসবুক যদি একঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকে তাহলে পেশাগত এবং আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। সাংবাদিক হিসেবে আমি প্রথমেই অনলাইন সাংবাদিকতার কথা বলব। অনলাইন সংবাদপত্রগুলো ফেসবুক ছাড়া প্রায় অচল। ইন্টারেক্টিভ মিডিয়া হল এই ফেসবুক। শেয়ার, লাইক, কমেন্ট, পেইজ, গ্রুপ ইত্যাদি বিষয় মিলে কী পরিমাণ ইন্টারেক্টিভিটি ঘটে সেটা অভিজ্ঞরা অবশ্যই অনুধাবন করবেন। একটা নিউজ মুহূর্তেই ১০ হাজার/ ২০ হাজার বার শেয়ার হয়ে যায়। মন্ত্রণালয়ে সাড়া পড়ে। কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে তাৎক্ষণিকভাবে। কতশত সমস্যার সমাধান মুহূর্তের মধ্যে হয়ে যায় এই ফেসবুকের জন্য।

মোবাইল ফোন জার্নালিজম (মোজো জার্নালিজম) নামে একটি ধারণা ২০০৪ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চর্চা হচ্ছে। আমরাও করছি এই সাংবাদিকতা। ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে গ্রুপ খোলে সেখানে একটা হাউজের সাংবাদিকরা স্পট থেকে অডিও-ভিডিও এবং ছোট ছোট বর্ণনা লিখে পাঠাচ্ছেন। অফিসে বসা দক্ষ সংবাদকর্মীরা সেগুলো একটু গুছিয়ে নিয়ে আপ করছেন। এখন যে দ্রুতগতির সাংবাদিকতা সেটাকে অনেকখানি সম্ভব করেছে ফেসবুক। মোবাইল ফোনেই লিখে নিউজ, ভিডিও পাঠিয়ে অফিসে পাঠিয়ে দিচ্ছেন রিপোর্টাররা। মোবাইল ফোন ইউজ করে প্যাকেজ বানাচ্ছেন নানা টেলিভিশন মাধ্যম। টেলিভিশন, প্রিন্ট সংবাদপত্র, রেডিও এগুলো ফেসবুক ছাড়া চলে এসেছে। কিন্তু অনলাইন সাংবাদিকতা ফেসবুক ছাড়া এখন অসম্ভব।

আর টিভি, রেডিও কিংবা প্রিন্ট মিডিয়াও এখন ফেসবুক কিংবা ইউটিউবের উপর নির্ভরশীল। কত বিরল ছবি, ভিডিও এখন ফেসবুকের মাধ্যমে এদের করায়ত্ত্ব হয় এবং তারা সেগুলোতে এক্সক্লুসিভ লেবেল দিয়ে প্রচার করে। যেমন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার টর্নেডোর ঘটনা কিংবা পদ্মায় লঞ্চডুবির ভিডিও অথবা আল্লামা শফি হুজুরের ‘তেঁতুল তত্ত্ব’ ভিডিও কোথায় পাওয়া গিয়েছিল সেটা নিশ্চয় কেউ ভোলেননি।

বড় বড় মন্ত্রী বাংলাদেশে এখন ফেসবুকে অনলাইন থাকেন। তারা বুঝতে পেরেছেন ফেসবুকের গুরুত্ব। প্রশাসনিক কাজ করছেন। নিজেই ছবি তুলে দিচ্ছেন, একটু বর্ণনা লিখে দিচ্ছেন। সংবাদমাধ্যমগুলো সে ছবি এবং বর্ণনা ব্যবহার করছেন। মানুষ আগের চেয়ে অনেক দ্রুত দেশ-বিদেশের আপডেট জানতে পারছেন। বিপদে-আপদে এবং নানা সম্ভাবনায় সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন। পুলিশ, আর্মি, নেভি, বিমান বাহিনী, আওয়ামী লীগ, বিএনপি অর্থাৎ সকলেই এখন ফেসবুকে আছেন।

রাত জেগে ফেসবুকে যদি কেউ অপ্রয়োজনীয়ভাবে সময় কাটায়, তার যদি স্বাস্থ্যহানী ঘটে কিংবা পড়ালেখায় ক্ষতি করে, এর দোষ তো ফেসবুকের না। যে অযথা সময় নষ্ট করে তার দোষ। রাষ্ট্র তাকে বোঝাবে, তার মা-বাবা তাকে বোঝাবে। সচেতন করবে। নির্দিষ্ট বয়সের আগে মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে রাষ্ট্র। কিন্তু এদের জন্য ফেসবুক বন্ধের চিন্তা কখনোই সঠিক হতে পারেনা। কোনো কনটেন্ট যদি সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর হয় তাহলে সাইবার ক্রাইম ইউনিট আছে তারা দেখবে। ফেসবুক অথরিটির সাথে যোগাযোগ করে কোনো কন্টেন্ট ডিলিট বা ব্লক করা যেতে পারে। যে রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করবে তাকে খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা যেতে পারে। বড় বড় অপরাধীকে খুঁজে বের করতে এখন ফেসবুক কাজে দিচ্ছে। এমন কি মার্ডার কেস পর্যন্ত সমাধান করতে ফেসবুক এখন একটা বড় সূত্র কিংবা উৎস।

ফেসবুকের মাধ্যমে কতশত ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠছে। অনলাইন নানা বিজনেজ এখনতো অনেকাংশেই ফেসবুকের ওপর নির্ভরশীল। যাইহোক কথা শেষ করি। কাজের লোকের কাছে ফেসবুক এক মিনিটও বন্ধ করার বিষয় না। আবার ‘অকাজের’ লোকের জন্য ফেসবুক এতো গুরুত্বপূর্ণ না। তবে কথা থেকে যায়। আমি সাংবাদিক, আমি বলছি, ফেসবুক আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যে কিনা শুধু ব্যক্তিগত কাজে ফেসবুক ব্যবহার করে তার গুরুত্বকে খাটো করে দেখার অধিকার আমাকে কে দিয়েছে? বাংলা সিনেমার সেই গানটার কথা মনে আছে? ‘প্রতিদিন কত খবর আসে যে কাগজের পাতা ভরে, জীবন পাতার অনেক খবর রয়ে যায় অগোচরে!’ জীবন পাতার সেই অগোচরে থাকা খবর এখন সামনে নিয়ে আসছে ফেসবুক। তাই ফেসবুক বন্ধ নয়। এই যুগে একজন মানুষ একটা গণমাধ্যম হয়ে উঠার ক্ষমতা রাখেন। তাই ফেসবুকের গঠনমূলক ব্যবহার নিশ্চিত করার চেষ্টা করতে হবে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

খেলার জগতের সামাজিক দায়বদ্ধতা ও পেশাদারি কাঠামো

লাল-সবুজের তরুণ প্রজন্মের এ সময়ের প্রিয় শ্লোগান, ‘বাংলাদেশের জান, সাকিববিস্তারিত পড়ুন

আগস্টের শোককে শক্তি হিসেবে নিতে পারি আমরা তরুণেরা

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তিবিস্তারিত পড়ুন

বাবা যখন ধর্ষক

যেখানে আপন বাবাই ধর্ষণ করে, সেখানে সৎ বাবার ধর্ষণ আমাদেরবিস্তারিত পড়ুন

  • দুই বড় দেশ যখন প্রতিবেশী ও প্রতিযোগী
  • মৌসুমি নৌকা শোরুম
  • ভারতবিদ্বেষ কেন বেড়ে চলেছে?
  • জনগণের কাছে শেখ হাসিনাই জয়ী
  • ‘গুলিস্তান’ নেই, তবু আছে ৬৪ বছর ধরে
  • পদ্মা ব্রিজ দিয়ে কী হবে?
  • যুদ্ধাহতের ভাষ্য: ৭০– “এখন অমুক্তিযোদ্ধারাই শনাক্ত করছে মুক্তিযোদ্ধাদের”
  • আসুন, বড় হই
  • আসুন, পিঠের চামড়া না তুলে পিঠ চাপড়ে দিতে শিখি
  • বাড়িওয়ালা মওদুদ ও বাড়িছাড়া মওদুদ
  • ব্রিটেনের নতুন সরকার নিয়ে যে শঙ্কা!
  • আওয়ামী লীগ ছাড়া কি আসলে কোনো বিকল্প আছে?